জাহাঙ্গীর আলম ॥ পা দিয়ে লিখে টানা চতুর্থবার জিপিএ-৫ পাওয়া যশোরের সেই তামান্না নূরাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে তাকে ইনসটিটিউটের কেবিনে ভর্তি করা হয়। ইনস্টিটিউটে ভর্তি রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা তার কৃত্রিম দুই হাত ও এক পা লাগানোর কথা ভাবছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তামান্নার বাবা রওশন আলী।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন গণমাধ্যমকে বলেন, তার চিকিৎসার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড
গঠন করা হয়েছে।বুধবার গত মঙ্গলবার আমরা (মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা) বসেছিলাম। আমরা চেষ্টা করছি কৃত্রিম হাত-পা লাগিয়ে তার চলাচলের ব্যবস্থা করার। আগামী ১২ মার্চ আবারও মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বসবেন।
এদিকে, নিজের কৃত্রিম পা ও হাত লাগানোর খুশিতে উচ্ছাসিত অদম্য ছুটে চলা তামান্না নূরা বলেন, স্টিফেন উইলিয়াম হকিং দেখিয়েছিলেন হুইল চেয়ারে বসেই, কীভাবে মহাবিশ্বে ঘুরে বেড়ানো যায়। আমি তো কিছুটা চলাফেলা করতে পারি। আমি পড়াশুনা শেষ করে গবেষক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। এই স্বপ্ন পূরণে আমার সারথি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি তার সহযোগিতায় আমার শরীরে কৃত্রিম হাত পা লাগানোর সকল ব্যবস্থা হচ্ছে। আমার কি যে খুশি লাগছে আপনাদের বুঝাতে পারবো না।
মেয়ের স্বপ্ন পূরণে কৃত্রিম হাত পা লাগানোর সিন্ধান্তে খুশিতে আত্মহারা তামান্নার বাবা রওশন আলী। তিনি জানান, মেয়েকে এই পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারব কখনো কল্পনা করি। তামান্নার জন্মের পর থেকে নানা প্রতিকূলতার মোকাবিলা করতে হয়েছে আমাদের। তারপরও হাল ছাড়িনি। মেয়েটার জন্য ঠিকমতো কোনো কাজ করতে পারি না। সারাক্ষণ ওর দিকে খেয়াল রাখতে হয়। ওর স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে গবেষক হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণে শেখ হাসিনা এগিয়ে এসেছে। নিয়েছেন তামান্নার দায়িত্ব। সেই কারণে তামান্নাকে শেখ হাসিনার নির্দেশে আজ তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসারা বলছেন তামান্নাকে কৃত্রিম বাম পা লাগালে স্বাভাবিক মানুষের মতো হাটতে পারবেন। মেয়েটার স্বপ্ন পূরণে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তামান্নার বাবা।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না নূরা। তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। চলতি বছরে এইচ এসসি পরীক্ষার ফলাফলে প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসির মতো এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। এর আগে তামান্না ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। একই ফল করেছিলেন পিইসি ও জেএসসিতেও। বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার (ননএমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন তামান্না। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেল ও সন্ধ্যায় পৃথক দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে অডিওকলে ফোন দিয়ে তামান্নাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা। একইসঙ্গে দুই বোন তামান্নার স্বপ্ন পূরনে যেকোনো সহযোগিতার আশ্বাস দেন। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে তার স্বপ্ন পূরণে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শে বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করেছেন তিনি। এছাড়া কয়েকদিন পর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তামান্নার সঙ্গে দীর্ঘ ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী তামান্নাকে ভার্সিটিতে মাইক্রোবায়োলোজি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন এবং খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষামন্ত্রী তামান্নার সাথে দেখা করতে যশোরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.