॥ মাওলানা মোঃ আবুল হাসান ॥
যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য যেকোনো সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোনো না কোনো পথ বের করে দেবেন। এটা মুমিনদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াদা। মহান আল্লাহ সূরা আত তালাকে বলেছেন, “যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য (সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার) কোনো না কোনো পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।” (আত তালাক : ২-৩)।
আল্লাহকে যে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন। (আত তালাক : ৪)।
এটা আল্লাহর বিধান, যা তিনি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন; আল্লাহকে যে ভয় করে তিনি তার পাপ মোচন করবেন এবং তাকে মর্যাদাজনক পুরস্কারে ভূষিত করবেন। (আত তালাক : ৫)।
হাদীসে আছে-
যদি তুমি মানুষকে ভয় পাও,
পৃথিবী তোমায় ভয় দেখাবে,
আর যদি তুমি স্রষ্টাকে ভয় কর
তাবৎ পৃথিবী তোমায় ভয় করবে।
তাকওয়া মুমিনের একটি অপরিহার্য গুণ। কুরআন মাজীদে তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য অনেক সুসংবাদ বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ মুত্তাকি ও তাকওয়াবানদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে অগণিত পুরস্কার নির্ধারণ করে রেখেছেন।
আল্ কুরআনে ২৭ স্থানে মুত্তাকিদের জন্য সুসংবাদ উল্লেখিত হয়েছে। যেমন-
সম্মান-মর্যাদার সুসংবাদ : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হচ্ছে মুত্তাকিগণ।’ (সূরা হুজুরত : ১৩)।
মহান আল্লাহর মহব্বতের সুসংবাদ : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ (সূরা তাওবা : ৪)।
কবুলিয়্যাতের সুসংবাদ : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ শুধু মুত্তাকিদের কুরআন কবুল করেন।’ (সূরা মায়েদা : ২৭)।
শ্রেষ্ঠত্বের সুসংবাদ : ‘যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তারা কিয়ামতের দিন তাদের (কাফেরদের) ঊর্ধ্বে থাকবে।’ (সূরা বাকারা : ২১২)।
শাস্তির ভয় থেকে মুক্ত থাকার সুসংবাদ : ‘যারা নিজেদের সংশোধন করে এবং সৎ থাকে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা কখনো দুঃখিত হবে না।’ (সূরা আ’রাফ : ৩৫)।
জান্নাতে বিভিন্ন নিয়ামতের এবং আল্লাহর দীদার লাভের সুসংবাদ : ‘মুত্তাকিরা থাকবে উদ্যানরাজি ও স্রোতস্বিনী বিধৌত নহরে। সত্যিকারের মর্যাদাপূর্ণ আসনে, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মালিকের সান্নিধ্যে।’ (সূরা কামার : ৫৪-৫৫)।
তাকওয়া অবলম্বন করে যারা জীবন পরিচালনা করবেন, তাদের জন্য শুধুমাত্র একটি সূরাতেই (সূরা আত তালাক : ২-৫)। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ৬টি কাক্সিক্ষত পুরস্কার ও সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে।
সুসংবাদগুলো হচ্ছে-
১. তাকে সকল সমস্যা থেকে উদ্ধারের পথ বের করে দেবেন।
২. তাকে কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিক প্রদান করা হবে।
৩. নেক ইচ্ছা পূরণ করবেন।
৪. তাদের সকল কাজ সহজ করে দেবেন।
৫. তাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।
৬. তাদের মর্যাদাজনক পুরস্কারে ভূষিত করবেন।
সুবহানাল্লাহ!
সুবহানাল্লাহী ওয়া বিহামদিহী!
আমরা যদি এ আয়াত নিয়মিত পাঠ করি ও এর ওপর আমল করি, তাহলে এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ আমাদের পরকালীন সফলতার সাথে সাথে দুনিয়ার জীবনেও সমস্যার সমাধান ও জীবন-জীবিকার পথ সহজ করে দেবেন, ইনশাআল্লাহ্।
যারা চাকরি-বাকরি না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় দিনযাপন করছেন কিংবা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে উত্তরণের পথ খুঁজে পাচ্ছেন না বা সমস্যা ও বাধা মোকাবিলায় আপাতত আলোর কোনো পথ দেখছে না, তাদের সবার জন্য এ আয়াতগুলো খুবই মোটিভেশনাল ও প্রশান্তিদায়ক, যা রোগ-শোক ও সমস্যা নিরাময়ে কাজ করবে।
সূরা আত-তালাকের ২ ও ৩নং আয়াত আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে নিয়মিত পাঠ করলে যাবতীয় সমস্যা সমাধান; বিশেষ করে রুজি বৃদ্ধি, চাকরি-বাকরির উন্নতি হওয়া, সন্তান-সন্ততির যথাযথ প্রতিপালনে, কালো জাদু, বাণ, হিংসুকের হিংসা, জ্বিন ও ইনসানের অনিষ্ঠতা, শত্রুর শত্রুতা ও জালেমের জুলুম ও অত্যাচার, ক্ষতিকর আশঙ্কা হতে মুক্তি পেতে আয়াতের এ অংশ দোয়া হিসেবে খুবই কার্যকরী।
মহান আল্লাহ সূরা বনী ইসরাইলে আল কুরআনকে মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত বলে উল্লেখ করেছেন এবং কাফের মুশরিকদের জন্য খোসারা বা ক্ষতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সূরা আত তালাকের নিম্নোক্ত আয়াতটি আমরা দোয়া হিসেবে মুখস্থ করে নিতে পারি, “ওয়া মাই-ইয়াত্তাকিল্লাহা ইয়াজ আল্লাহু মাখরাজ। ওয়া ইয়ারযুকহু মিন হাইসু লা ইয়াহ তাসিব। ওয়া মান ইয়া তা ওয়াক্কাল আলাল্লাহি ফাহু ওয়া হাসবুহু, ইন্নাল্লাহা বালিগু আমরিহি,কাদযায়াল্লাহু লিকুল্লি শাইয়িন কাদির।”
মহান আল্লাহ আমাদের তাকওয়া ভিত্তিক জীবন গঠনের তওফিক দান করুন। জাতিকে বর্তমান সংকট উত্তরণের পথ সহজ করে দিন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.