নিজস্ব প্রতিবেদক : সরাসরি সরকারের সঙ্গে নেই এমন ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নে দ্বিধায় আছে। তাদের একটি অংশ নির্বাচনের দিকে ঝুঁকে আছে। তবে তাদের বড় অংশ মনে করছে, দেশ ভালো চলছে না। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগী হয়ে আরেকটি ‘পাতানো’ নির্বাচনে অংশ নিলে ধর্মভিত্তিক দল হিসেবে এর পরিণতি কী হতে পারে তা নিয়েও ভাবছেন তারা। তাছাড়া মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা তা মেনে নেবে কি না, সে দুশ্চিন্তাও আছে দলগুলোর ভেতরে।
তবে সরকারের সঙ্গে অনেক ইসলামি দলের সখ্য গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া গত ১৫ বছরে নিবন্ধিত এবং নিবন্ধনের বাইরে সরকারের ছায়ায় নতুন অনেক দল হয়েছে। তারা সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অনেক ইসলামি দল নির্বাচনের পক্ষে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে। যদিও সরকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক নেই, এমন ইসলামি দলগুলো এখনো নির্বাচনের প্রশ্নে চুপ রয়েছে। তারা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে, বিশেষ করে বিএনপির নেতৃত্বে সরকার বিরোধী আন্দোলন-কর্মসূচির চূড়ান্ত পরিণতি কোন দিকে যায় তার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।
এদিকে নিবন্ধন বাতিল হলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে উল্লেখযোগ্য সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর। জামায়াতের বিভিন্ন স্তরের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটির বেশ কয়েকজন নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। তারা মনে করছেন, নির্বাচনে অংশ নিলে সরকারের দমন-পীড়ন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি রাজনীতিও করা যাবে। কিন্তু না গেলে বিএনপির মতো তাদেরও রোষানলে পড়তে হবে। এমনকি তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও মনে করছেন। তবে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। কেয়ারটেকার সরকার দাবিতে মাঠে যারা আন্দোলনে আছেন, তাদের পাশে থাকবে জামায়াতে ইসলামী।’
অপরদিকে একতরফা তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামী আন্দোলন। তবে পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায়, সেদিকে নজর রাখছে দলটি। আগামী ২৮ তারিখে জাতীয় সংলাপের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা অধ্যাপক ইউনুস আহমাদ বলেন, ‘আমরা জাতীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাব না। নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) বাতিল করতে হবে। ইসলামী আন্দোলন এই সিদ্ধান্তেই অটল আছে।’
হেফাজতে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত ছয়টি দলের মধ্যে কারও কারও নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছা থাকলেও তারা সার্বিক পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে। দলগুলো হলো ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি। গঠন করেছেন সমমনা ইসলামী জোটও। ভোটের মাঠে তাদের অবস্থান কী হবে জানা যাবে ২৫ নভেম্বরের মধ্যে।
খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল জলিল বলেন, ‘দল নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেব না। আমরা আগের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছি। সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া কঠিন হবে।’
খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। ২৫ নভেম্বর শুরা বৈঠকে আমরা নির্বাচনে যাব কি না, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমমনা ৬টি ইসলামী দল নির্দলীয় সরকারের দাবিতে একসঙ্গে আন্দোলন করলেও নির্বাচন যাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যেক দলের নিজস্ব ব্যাপার। আমরা কখনোই বলিনি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারসহ তিন দফা দাবিতে আমরা আন্দোলন করে আসছি। আমাদের পরিষ্কার কথা, এবার একতরফা নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।’
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সেই নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোট অংশ গ্রহণ করবে। আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কালই (আজ) জানাব।’ হেজাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানি বলেন, ‘হেফাজতের ১৩ দফা বাস্তবায়নের যারা প্রতিশ্রুতি দেবে তাদের সঙ্গে আমরা থাকব।’
তিনি বলেন, ‘হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন। কিন্তু ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর। যারা ১৩ দফা বাস্তবায়ন করবে, যারা মদিনার সনদ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেবে দেশে ইসলামী মূল্যবোধ ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দেবে তাদের সঙ্গে আমরা আছি।’
আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকারঘেঁষা কয়েকটি ইসলামী দল। ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রগতিশীল ইসলামী জোটের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আওয়াল বলেন, ‘আমরা তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিব। তৃণমূল বিএনপির প্রতীকে ইসলামী জোটের প্রার্থীরা অংশ নেবেন। এবার জোট থেকে ৯১ জন প্রার্থী নির্বাচন করবে। তবে জোটগতভাবে আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচনী প্রার্থী দিব।’
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। দলীয় কার্যালয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলবে এই মনোনয়ন ফরম বিক্রি। দেড় শ আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে। তবে নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে বলা সময় এখনও হয়নি। আমাদের স্পষ্ট কথা ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো প্রহসনের নির্বাচন চাই না।’ বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এর মহাসচিব স উ ম আবদুস সামাদ বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে তিনশ আসনে প্রার্থী দেবে। সোমবার সকাল থেকে শুরু হবে মনোনয়ন ফরম বিক্রি। তবে নির্বাচনে ঘিরে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি খুব ভালো নয়। দেশে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকটে পড়তে পারে। সেই সংকট থেকে উত্তরনের জন্য সব দলের নির্বাচনে যাওয়া সমীচীন।’
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.