নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে।

বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

ভাষণে সিইসি সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। এ সময় তিনি সংবিধান ও আইনের আলোকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন। বলেন, নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে।

দেশবাসীকে নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সিইসি জানান, রাজনৈতিক দলগুলো প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোটগ্রহণ শুরুর আগের ৪৮ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত প্রচার চালাতে পারবে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন জমাদানের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর। নিষ্পত্তি ৬-১৫ ডিসেম্বর। প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচারের সময় ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসি, তারই ধারাবাহিকতায় বিকাল ৫টায় নির্বাচন-সংক্রান্ত ২৬তম কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার সিদ্ধান্তক্রমে সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশের সব গণমাধ্যমে জাতির উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভাষণ দেন। ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি বা তফসিল ঘোষণা করেন তিনি।

সিইসি বলেন, আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর বিগত ২০ মাসে সংসদের ১৬টি উপনির্বাচনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় সরকারের সহস্রাধিক নির্বাচন করেছি। আগ্রহী সকল রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী সমাজ, শিক্ষাবিধ, নাগরিক সমাজ, সিনিয়র সাংবাদিক এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন অংশিজনদের সঙ্গে একাধিকবার সংলাপ ও মতবিনিময় করেছি। তাদের মতামত শুনেছি। সুপারিশ জেনেছি। আমাদের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেছি। নিবন্ধিত তবে নির্বাচনে অনাগ্রহী সকল রাজনৈতিক দলকেও একাধিকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনুচ্ছেদের বিধান মতে সংসদের মেয়াদ পূর্তির পূর্ববর্তী ৯০ দিবসের মধ্যে সংসদের সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সম্বলিত এই নির্দেশনা নির্বাচন কমিশন সরকারের নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীসমূহের সহায়তা নিয়ে সম্পন্ন করে থাকে। সরকার আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতি বারংবার ব্যক্ত করেছে। কমিশনও তার আয়ত্বে থাকা সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে এবং সরকার থেকে আবশ্যক সব সহায়তা গ্রহণ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার বিষয়ে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করবে। পরে তিনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।

সিইসি জানান, দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ১৯ লাখ ৭১ হাজার । ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার। মোট ২ লাখ ৬২ হাজার বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। ৬৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, তার আগে ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে। সেই হিসাবে গত ১ নভেম্বর নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে।

এদিকে তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আগারগাঁওয়ে কমিশন ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া কমিশন ভবনে এনআইডি সংশোধনের জন্য ব্যক্তিগত শুনানি মঙ্গলবার থেকে বন্ধ করা রয়েছে।