জাতীয় সংবাদ | তারিখঃ অক্টোবর ৩০, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1875 বার
ঢাকা অফিস : সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা তিন দিনের অবরোধে সারাদেশে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। সড়ক পরিবহন, লঞ্চ ও ট্রেন চলাচলে যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় থাকবে। যেকোনো সমস্যায় ৯৯৯ এ ফোন করলে ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে।
এছাড়াও র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সারাদেশে ১৫টি ব্যাটালিয়নে তিন শতাধিক র্যাব সদস্য মাঠে কাজ করবে। একই সঙ্গে বাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিসি)। অন্যদিকে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলও স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থা দুটির কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আগামীকাল থেকে টানা তিন দিন সারা দেশে সড়ক, রেল, নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির ব্যাপারে জরুরি আলোচনা করার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিকদের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিএনপির ডাকা মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবারের অবরোধ উপেক্ষা করে ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামীকাল থেকে টানা তিন দিন ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য সারা দেশের পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনুরোধ জানানো হয়।
এ ছাড়া সদরঘাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। এই তিন দিনে আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা হিটলার বল বলেন, বাস চলবে। সরকারি গাড়ি কোনো অবরোধ বা হরতালে বন্ধ থাকে না।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, অবরোধে ট্রেনের কোনো সময়সূচি পরিবর্তন হবে না। ট্রেন সময়মতো চলবে।
এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, বিএনপি-জামায়াত সমাবেশ ও হরতাল কর্মসূচির নামে শনিবার ও রবিবার দলীয় সন্ত্রাসীরা ঢাকাসহ সারা দেশে ১৩টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। যানবাহন ধ্বংস করেছে এবং শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করেছে। অবরোধের দিনগুলোতে গাড়ি চলাচলে যাতে কোনো প্রকার বাধাগ্রস্ত না হয়, তার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৯ অক্টোবরের হরতালের মতো অবরোধেও যথারীতি মেট্রোরেল চলবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সিনিয়র সহসভাপতি আলহাজ বদিউজ্জামান বাদল ঢাকাটাইমসকে বলেন, কোনো সমস্যা না হলে স্বাভাবিকভাবে সারাদেশে লঞ্চ চলাচল করবে। আমাদের নিরাপত্তার জন্য নৌ পুলিশ এবং কোস্টগার্ড সব ব্যবস্থা নেবে। নৌ পথের নিরাপত্তার বিষয়টা তারা দেখবেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম বিভাগের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, অবরোধে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। ট্রেন চলাচলে নিরাপত্তা নিতে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি প্রতিটি স্টেশনে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছেন। এছাড়াও প্রতিটি স্টেশনে এসপিরা আলাদাভাবে নজর দিচ্ছেন। যেকোনো সমস্যায় ৯৯৯ এ ফোন করলে ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে যাবে। আজকে সমন্বয় সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করি আপনাদের দোয়ায় ট্রেন চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না।
বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা তিনদিনের অবরোধে র্যাবের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সোমবার র্যাবের পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩১ অক্টোবর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তিন দিনের জন্য দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষা করতে র্যাব ফোর্সেস নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব ফোর্সেসের ১৫টি ব্যাটালিয়নের তিন শতাধিক টহল নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম চলমান থাকবে।
র্যাব জানায়, কেউ যদি কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা সহিংসতার পরিকল্পনা করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় র্যাব ফোর্সেস এর স্পেশাল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে। যেকোনো নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে র্যাব ফোর্সেস সার্বক্ষণিক দেশব্যাপী নিয়োজিত থাকবে।
নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদেরকে সিসিটিভি ফুটেজ, ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে শনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে বলে জানায় র্যাব। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অনলাইনে স্বার্থান্বেষী ও সুযোগ সন্ধানী মহল বিভিন্ন উসকানিমূলক তথ্য, মিথ্যা তথ্য বা গুজব ছড়াচ্ছে; বিভিন্ন ধরনের ভিডিও এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। র্যাব ফোর্সেসের সাইবার মনিটরিং টিম এসব দুষ্কৃতকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সার্বক্ষণিক সাইবার জগতেও নজরদারি রাখছে।