গ্রামের সংবাদ ডেস্ক॥ অপরাধীকে আটক, দেহ তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা পাচ্ছে আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। পাশাপাশি বাহিনীতে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হচ্ছে। এমন বিধান রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল ২০২৩’ সোমবার সংসদে উঠেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিলটি উত্থাপন করলে তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

এর আগে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বিলটির ওপর আপত্তি জানান। ফখরুল ইমাম বলেন, পুলিশের সমান্তরাল ক্ষমতা আনসার বাহিনীকে দেওয়া হলে দুটি বাহিনীর মুখোমুখি অবস্থান হয়ে যেতে পারে। তিনি বিলটি প্রত্যাহারের দাবি জানান। জাপা সদস্যের আপত্তির জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সামনে নির্বাচন। এতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করতে হলে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যদেরও মোতায়েন করতে হবে। পরে কণ্ঠভোটে ফখরুল ইমামের দাবি নাকচ হয়ে যায়।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একাদশ সংসদের সর্বশেষ চলমান অধিবেশন আগামী ২ নভেম্বর শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর আগে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বিলটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত বিলের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যাটালিয়ন সদস্যের সামনে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে অপরাধীকে আটক করে অবিলম্বে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবে এবং ক্ষেত্রমতো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে আটক ব্যক্তির দেহ তল্লাশি, কোনও স্থানে প্রবেশ ও তল্লাশি এবং মালামাল জব্দ করতে পারবে।’

বিলের ২১ ধারায় ‘বিদ্রোহ সংগঠন বা বিদ্রোহ সংগঠনের প্ররোচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিলে অপরাধ বিচারের জন্য সংক্ষিপ্ত আনসার আদালত এবং বিশেষ আনসার আদালত নামে দুটি আদালত গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও সরকারি বা ব্যাটালিয়ন সদস্যের সম্পত্তি চুরি করা, যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে প্যারেডে অনুপস্থিত থাকা, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রদর্শন অপরাধ হিসেবে গণ্য করে চাকরি থেকে বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অপসারণের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানিয়ে জাপার সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘কথায় আছে ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়। এখানে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত হয়ে গেছে। পুলিশের কাজটা যদি বিভক্ত এবং সমান্তরাল করা হয় তাহলে কাজটা করা যাবে না। দেশে সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর আলাদা আলাদা কাজ আছে। এলিট বাহিনীও করা হয়েছে।’

ফখরুল ইমাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তার জন্য আনসার বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এই বিলে সাত ও আট ধারা অনুযায়ী পুলিশ যা করে তা করতে পারবে আনসার বাহিনী। পুলিশের মতো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে গ্রেফতার করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। বিলটা এভাবে পাস হলে পুলিশের সমান্তরাল ফোর্স হয়ে যাবে আনসার বাহিনী।’

তিনি পুলিশ ও আনসারকে মুখোমুখি না করে পাশাপাশি রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘অন্যথায় সমূহ বিপদ।‘ জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্যোগ এলেই আনসার বাহিনীর সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। নির্বাচনের সময় যে পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য প্রয়োজন পুলিশ বাহিনীতে এত পরিমাণ নেই। এ পর্যন্ত ৬ লাখ আনসার নিয়োগ করতে হয়েছে। নির্বাচনের সময় সমপরিমাণ আনসার বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।