বাদল সিকদার ॥ মাদক কেনার পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে খুন হয়েছেন ইজিবাইক চালক সজীব গাজী। গাঁজা সেবন করানোর পর তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এই হত্যায় সরাসারি জড়িত দুই জনসহ ৪ জনকে আটক এবং সজীব গাজীর কাছ থেকে ছিনতাইকৃত ইজিবাইক উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন। যশোর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আটকরা হচ্ছে, শার্শা উপজেলার গয়ড়া গ্রামের লিটন আলীর ছেলে বর্তমানে বড়আঁচড়া এলাকার বাসিন্দা শামীম হোসেন (২০), সওদাগার আলীর ছেলে আশরাফুল আলম রাব্বি (১৯), বড়আঁচড়া মাঠপাড়ার ইসমাইল হোসেন বারমার ছেলে আজম হোসেন (২০) ও রাঢ়িপুকুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর কবির (৩০)।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বুধবার সকালে বেনাপোলের খড়িডাঙ্গা গ্রামের ছকোর খাল নামক স্থান থেকে ইজিবাইক চালক সজীব গাজীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত সজীব গাজী গয়ড়া গ্রামের সহিদ গাজীর ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা সহিদ গাজী বেনাপোল পোর্ট থানায় মামলা করলে ডিবি পুলিশ হত্যায় জড়িতদের শনাক্তসহ আটক এবং ছিনতাই হওয়া ইজিবাইক উদ্ধারে অভিযানে নামে। এক পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বুধবার রাতে বেনাপোলের বলফিল্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকা-ে জড়িত শামীম ও রাব্বিকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত রক্তমাখা ১টি চাকু উদ্ধার করা হয়। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সজীব গাজীকে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছিনতাইকৃত ইজিবাইক বিক্রিতে সহযোগিতার অভিযোগে আজম ও জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়। এছাড়া ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকটি বাগআঁচড়ার ময়ুরী সিনেমা হলের সামনে থেকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার, এসআই মো. মফিজুল ইসলাম, তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মুরাদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মুরাদ হোসেন জানান, নিহত সজীব এবং আটক শামীম ও রাব্বি সকলেই মাদক ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে রাব্বি গাঁজা ক্রয়ের জন্যে সজীবকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু সজীব তাকে গাঁজা দেননি। টাকাও ফেরত দেননি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিলো। গত ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাব্বি ও শামীম বেনাপোল কাস্টমের সামনে সজীবকে পেয়ে গাঁজা সেবন করার প্রলোভন দেখান। এরপর তারা সজীবের ইজিবাইকে করে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে ৩ জনে গাঁজা সেবন করেন। গাঁজা সেবনের এক পর্যায়ে রাব্বি ৫০ হাজার টাকা ফেরত চান। কিন্তু সজীব টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাব্বি ও শামীম তাকে গলা কেটে হত্যা করেন। পরে তারা নিহতের ইজিবাইকটি আটক আজমের কাছে নিয়ে বিক্রি করে দিতে বলেন। আজম ওই ইজিবাইকটি বাগআঁচড়ার মিলন নামে এক যুবকের কাছে দিলে তিনি সেটি আবার একই এলাকার আল-আমিনকে দেন বিক্রি করতে। আল-আমিন ইজিবাইকটি নিয়ে তার সঙ্গী জাহাঙ্গীরের কাছে রেখে দিয়েছিলো। বাগআঁচড়ার ময়ুরী সিনেমা হলের সামনে থেকে আটক জাহাঙ্গীরের কাছ থেকেই সেই ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, আটক ৪ জনকে বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হলে এরমধ্যে শামীম, রাব্বি ও আজম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান আহম্মেদ ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অবন্তিকা রায় তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.