সানজিদা আক্তার সান্তনা : তুলসী একটি ঔষধিগাছ। তুলসী অর্থ, যার তুলনা নেই। এই পাতার ঔষধি গুনের কথা কারও অজানা নয়। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। ফলে নানা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পায় শরীর।

১. লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ে : একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত তুলসী পাতা খাওয়া শুরু করলে লিভারের ভেতরে জমতে থাকা টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে লিভারের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়, এবং লিভার সংক্রান্ত কোনও রোগ ধারে কাছেও ঘেষতে পারে না।

২. ওজন কমাতে : বেশ কিছু গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে দেহের অতিরিক্ত মেদ ঝরতে বেশি সময় লাগবে না। তাই চটজলদি যদি ওজন কমাতে চান, তা হলে নিয়মিত তুলসী পাতা খেতে ভুলবেন না যেন!

৩. দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় : নানা ধরনের ছোট-বড় চোখের রোগ সারাতে তুলসী পাতার কোনও বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত, ভিটামিন-এ র অভাবে চোখের রোগের সমস্যা কমাতে দারুণ কাজ দেয় তুলসী পাতা।

৪. পাকস্থলী সম্পর্কিত রোগ কমায় : গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ব্লটিং প্রভৃতি রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে হলে তুলসী পাতা দারুণ কাজে আসে। প্রতিদিন এক চামচ তুলসী পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে নানা রকমের পেটের রোগ একেবারে দূরে পালায়।

৫. ক্যান্সার : তুলসী পাতা খেলে ক্যান্সার রোগও দূরে পালায়। একাধিক গবেষণা অনুসারে, রোজ যদি তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া যায়, তা হলে ব্রেস্ট এবং ওরাল ক্যান্সার কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস করে তুলসী পাতার রস খেলে নানা রকমের জটিল রোগের হাত থেকে মুক্তি মেলে।

৬.অকাল বার্ধক্য ঠেকায়: তুলসীতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপার্টি অকাল বার্ধক্য থেকে রক্ষা করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে দারুণ লাভ পাবেন।

৭. সর্দি-কাশিতে স্বস্তি: ঠাণ্ডা লাগলে এবং গলায় ব্যথা হলে খালি পেটে তুলসীর চা পান করলে আরাম পাবেন। তাছাড়া খালি পেটে নিয়মিত কাঁচা তুলসী পাতা খেতে পারেন। এটির প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদে বুঝতে পারবেন।

৮. ডিটক্সিং প্রপার্টি : প্রতিদিন তুলসী পাতা খেলে শরীর থেকে টক্সিক পদার্থ বের হয়ে যায়। নিয়মিত তুলসী থেলে হজমশক্তি অক্ষুণ্ণ থাকে। গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের রোগের সম্ভাবনা কমে।

৯. সুন্দর ত্বক : খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায়। ত্বক দাগহীন ও উজ্জ্বল হয়। তবে এক-দুই সপ্তাহ নয়, টানা কয়েক মাস খেলে তবেই সেই প্রভাব দেখতে পারবেন।

১০. স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমায় : নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে মানসিক চাপ কমে। তুলসী পাতায় থাকা অ্যাডাপ্টোজেন মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে খুবই সহায়ক বলে মনে করা হয়। এছাড়া প্রতিদিন চিনি ছাড়া রং চায়ের সঙ্গে তুলসী পাতা মিশিয়ে খেলেও নানা উপকার পাওয়া যায়।

১১. রক্তে সুগার : রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন। নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাও বাড়ে। ফলে শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না। এ ছাড়া তুলসীতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের ভেতর থেকে নানা রকমের বিষক্রিয়া পদার্থ বের করে আনতে সাহায্য করে। ফলে ডিহাইড্রেশন কমে যায় ও কিডনির কার্যকারিতা সচল অবস্থায় থাকে। এর ফলে কিডনিতে পাথর হওয়া রোধ করা যায়।