বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনা নিয়ে তৈরি হবে প্রস্তাবিত ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল ৬-লেন সড়ক। পদ্মা এক্সপ্রেসওয়ের আদলে ১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং ডিজাইন চূড়ান্ত হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রস্তাবটি এখন উঠার অপেক্ষায়। ব্যবসায়ীদের মতে, সড়কটি হলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য দেশ নতুন এক যুগে পা রাখবে।
জানা যায়, ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত নির্মিত সড়কটি দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। পঞ্চান্ন কিলোমিটার এ এক্সপ্রেসওয়ের আদলে এবার ভাঙ্গা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে ১২৯ কিলোমিটারের ছয়-লেন সড়ক। প্রতি বছর বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে ১৫-২০ শতাংশ পণ্য আমদানি হচ্ছে। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলসহ উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগের জন্য ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল সড়কটির গুরুত্ব আরও বেড়েছে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যানজটমুক্ত, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে এ প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে সড়ক বিভাগ।
সওজ জানায়, সড়কটি ১ হাজার ৭৬১ কিলোমিটার বিশিষ্ট এশিয়ান হাইওয়ের (এএইচ) অংশ। এশিয়ান হাইওয়ের এএইচ-১ তামাবিল দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করে সিলেট-ঢাকা-পদ্মা সেতু-যশোর-বেনাপোল দিয়ে অতিক্রম করেছে। প্রস্তাবিত সড়কটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে নগরকান্দা হয়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, সেখান থেকে মধুমতি সেতু পর্যন্ত। আবার মধুমতি সেতু থেকে নড়াইলের লোহাগড়া, নড়াইল সদর, যশোরের বাঘারপাড়া, যশোর সদর, ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত পৌঁছাবে।
দীর্ঘ এ সড়কটিতে ৩৪টি ওভারপাস ও ফ্লাইওভার, ১৮টি ব্রিজ, ১৫৫টি কালভার্ট, ২টি রেলওয়ে ওভারপাস ও ২৪টি ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১৩ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রকল্প ঋণ ১১ হাজার ৮২ কোটি টাকা। এরই মধ্যে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। করা হয়েছে ডিজাইনও। প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে আশাবাদী সড়ক বিভাগ।
সড়ক জনপথ অধিদফতরের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর পর এ সড়কটি তৈরির গুরুত্ব আরও বেড়েছে। ঢাকার সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করার জন্যই আমাদের এ প্রকল্প হাতে নেয়া। এরই মধ্যে আমরা প্রকল্পটি অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছি। প্রকল্পটির প্রাথমিক ডিজাইন পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। যেকোনো সময়ে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হবে।’
এ সড়কটি হলে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত হবে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির।
তিনি বলেন, এ সড়কটি নানা কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে। শুধুমাত্র বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানিই বাড়বে না, বরং এই সড়কটি যেহেতু এশিয়ান হাইওয়ের অংশ সেজন্য ভারতের এক রাজ্য থেকে বাংলাদেশ হয়ে আবার ভারতের অন্য রাজ্যে যেতে পারবে এ সড়ক দিয়ে। এতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কূটনীতিতেও নতুন দিগন্ত খুলবে। আর সব থেকে বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশই।
স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, দেশের প্রায় ৯০ ভাগ আমদানি পণ্য ভারত থেকে বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশে আসে। প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আমদানি হচ্ছে বেনাপোল দিয়ে। এ সড়কের কারণে আমদানি বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান বলেন, আমদানি পণ্য বেনাপোল থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছাতে সরু সড়কের কারণে প্রায়ই দীর্ঘ যানজট হয়। ফলে আমদানিকারকরা অনেক ক্ষেত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। প্রস্তাবিত নতুন এ সড়কটি হলে এসব সমস্যা থাকবে না। একদিকে যেমন কম খরচে পণ্য পৌঁছানো যাবে ঢাকাসহ সারাদেশে, সেই সঙ্গে সময়ও লাগবে অনেক কম। এ কারণে এ সড়কটি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লাভবান হবে যেসব জেলা
প্রস্তাবিত এ ছয়-লেন সড়কে যে জেলাগুলো লাভবান হবে, সেগুলো হচ্ছে: খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ। এ অঞ্চল থেকে দ্রুত সময়ে পণ্য ও সেবা ঢাকায় আসবে। জেলাগুলোর সঙ্গে বেনাপোল হয়ে ভারত ও ঢাকার সঙ্গে যাতায়াতে সময় কমবে।
সুত্র : সময় টিভি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.