আমি জানি যেকোন ভালো কাজই হোক না কেন আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই। একটি পত্রিকা জম্ম দেওয়া সহজ ঠিক সন্তানের মতো কিন্ত ধারাবাহিকভাবে খাদ্য-উপাথ্য দিয়ে বড় করে তোলা কিংবা ধারাবাহিতভাবে চালাতে গেলে অর্থের প্রয়োজন হয়। গ্রামের সংবাদও তার ভ্যাতিক্রম নয়। প্রতিবছর অনেক টাকা খরচ করতে হয়, কিন্ত আয়ের তুলনায় ব্যায়ের পরিমাণ কয়েকগুন বেশী। গ্রামের সংবাদ এর প্রকাশনা সত্যিকথা বলতে কি সাংবাদিকতার নেশা থেকেই প্রকাশ। এটা কোন লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয় বরং আর্থিক ক্ষতি জেনেও চালিয়ে যেতে হয় অভ্যাস হিসেবে।

দেশের হাজারো মিডিয়ার ভিড়ে সাপ্তাহিক গ্রামের সংবাদ শুধু একটি গণমাধ্যম নয়; আরো অন্যকিছু। সাপ্তাহিক গ্রামের সংবাদ হলো একটি চেতনার নাম; যে চেতনা পাঠকদের মানবিক, ধর্মীয় মুল্যবোধ, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঐতিহাসিক শুভক্ষণে গ্রামের সংবাদ এর সকল পাঠক, গ্রাহক, সমালোচক, কর্মরত সাংবাদিক লেখক- বিজ্ঞাপনদাতা-শুভানুধ্যায়ী সকলকেই অফুরন্ত শুভেচ্ছা। গ্রামের সংবাদের বাঁকে বাঁকে নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। কন্ঠ চেপে ধরার চেষ্টা হয়েছে; তেমনি মত প্রকাশে প্রতিবন্ধকতার চেষ্টাও কম হয়নি। গ্রামের সংবাদ থেমে থাকেনি, সব বাধা অতিক্রম করে আপোষহীন ভাবেই এগিয়ে চলেছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এখন সাংবাদিকতা ঝুকিপূর্ণ পেশা। বাংলাদেশ ও তার ব্যতিক্রম নয়। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ সংবাদ পত্রের সংখ্যা ৩১২৮টি। মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে শাসকদের অস্ত্র হিসেবে বিজ্ঞাপন তো রয়েছেই। এর মধ্যে দেশের কর্পোরেট হাউজগুলো যখন নতুন নতুন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করে সেটাকে ব্যবসার ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করেছে; গ্রামের সংবাদ ব্যবসা-বানিজ্য রক্ষার ঢাল নয়; দেশের স্বকীয়তা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার ঢাল হিসেবে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কাজ করছে। নানান সীমাবদ্ধতা, আর্থ-সামাজিক টানাপোড়েন, সংবাদপত্র শিল্পে অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দোলাচলে বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামের সংবাদ। “সত্য প্রকাশে নির্ভীক মুক্ত চিন্তার নিরপেক্ষ সাপ্তাহিক” স্লোগান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মুল তিন লক্ষ ‘সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার’ প্রতিষ্ঠায় লড়াই অব্যাহত রেখেছে। দেশের সাবভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ আর গণমানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, যা পাঠকদের কাছে গ্রামের সংবাদ আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। গ্রামের সংবাদ দলমত নির্বিশেষে সব পাঠকের পত্রিকা।

সম্পাদকীয় নীতির প্রশ্নে আপোষহীন থেকেই খবরকে খবর হিসেবে প্রচার করছে। দেশের রাজনীতি, বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, ভূ-রাজনীতি, সংস্কৃতি, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, মতামত, বিশ্লেষণ, শিক্ষাঙ্গন, সমাজ জীবন, নাটক-সিনেমা, সঙ্গীত, খেলাধুলা, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, ইসলামী দুনিয়া, আর্ন্তজাতিক ঘটনাবলীর খবরাখবর তুলে ধরেছে সব শ্রেণীর পাঠকের জন্য। খবর প্রকাশে এই বৈচিত্র প্রবীণ-নবীন সব শ্রেণীর পাঠকের মধ্যে রচনা করেছে সেতুবন্ধন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে চিন্তা-চেতনায়, কর্মে পরিবর্তিত বিশ্ব ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা কিছু সত্য, সুন্দর, ভালো, মহৎ, জনকল্যাণকর এবং দেশ-জনগনের পক্ষে সেগুলো তুলে ধরছে। ইসলামী মুল্যবোধের ব্যাপারে আপস না করেই খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মাবলম্বীর অধিকার, মত ও পথকে সমান গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলামী চেতনা লালন করলেও বিপরীতমুখী বাম রাজনীতির চিন্তা-চেতনা ও মতামত গুরুত্ব দিয়েই প্রকাশ করছে।

সাপ্তাহিক গ্রামের সংবাদ ৩১ জুলাই ২০২৩ উনিশ বছরে পদাপর্ণ করেছে। ২০০৪ সালে ২০ জুলাই পত্রিকাটি প্রকাশনা শুরু হয়। পত্রিকাটি দৃঢ়তা সততার সঙ্গে সত্য সংবাদ প্রকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। পাঠকের ভালোবাসায় পত্রিকাটি ১৮ পেরিয়ে ১৯ বছরে পদাপর্ণ করল। “সত্য প্রকাশে নির্ভীক মুক্ত চিন্তার নিরপেক্ষ সাপ্তাহিক” শ্লোগানকে বুকে ধারন করে বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সাপ্তাহিক গ্রামের সংবাদ পত্রিকাটি পাঠক মহলে সমাদৃত হয়েছে। সম্পাদক কর্তৃক মোঃ আব্দুল মুননাফ এর সম্পাদনায় সাপ্তাহিক গ্রামের সংবাদ পত্রিকাটি বন্দর নগরী বেনাপোল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। পাঠক, গ্রাহক, বিজ্ঞাপন দাতা, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীসহ পত্রিকার বর্ষপূর্তি, উনিশ বছর পদাপর্ণ উপলক্ষ্যে সকলকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

সম্পাদকীয়তে কোন কারণে কেউ দুঃখ পেলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এ প্রত্যাশা। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন এবং সত্য ও সুন্দরের প্রতি আমরা সবাই অবিচল থাকবো এ প্রথ্যাশা।

মোঃ আব্দুল মুননাফ
সম্পাদক ও প্রকাশক
সাপ্তাহিক গ্রামের সংবাদ