জেলার খবর, রাজশাহী বিভাগ | তারিখঃ জুলাই ৯, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3215 বার
আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী) : উত্তরাঞ্চলের ‘শস্যভাণ্ডার’ খ্যাত বরেন্দ্র অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সম্বনিত মিশ্র ফল চাষ পদ্ধতি। একে অন্যের দেখা দেখি উৎসাহিত হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তারা গড়ে তুলেছেন মিশ্র ফলের বাগান। লাভবানও হচ্ছেন তারা। আর এতে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা।
এমনই একজন উদ্যোক্তা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নদাকান্দ গ্রামের তৌফিকুল ইসলাম মিলন। তিনি ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাত্তোকত্তর পাস করে ঢাকায় একটি সফটওয়্যার কোম্পানীতে চাকরি নেন। ছয় বছর চাকরি করার পর ২০২০ সালে করোনাকালীন চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন। বাড়ি এসেই তিনি তার ৪ একর জমিতে গড়ে তোলেন পেয়ারা বাগান।
তৌফিকুল ইসলাম মিলনের বাগানে লাগানো হয়েছে গোল্ডেন-৮ জাতের ১ হাজার ৮০০ পেয়ারার গাছ। এর পাশাপাশি তার বাগানে রয়েছে ৩০০টি মাল্টা, ৬৫০টি কাগজি লেবু, ৪৫০টি সজনে, ২৫০টি কলা ও ৩৫টি উন্নতজাতের বরই গাছ।
তিনি আরো বলেন, এই বাগান থেকে প্রতিদিন ২০০ কেজি পেয়ারা বিক্রি হয়। এছাড়াও সপ্তাহে ২ হাজার পিস লেবু, দেড় মাস পরপর ১২০ কেজি সজনে পাতা ও বছরে প্রায় ৭৫ মন মাল্টা, ৪০ মন বরই ও ২৫০ কাদি কলা উৎপাদন হয়।এ ছাড়া বাগানেই পেয়ারা বিক্রি হয় ২৫ টাকা কেজি। এছাড়াও সজনে পাতা ৭৫০ টাকা ও মাল্টা ৭৫ টাকা, বরই ৫০ টাকা এবং কলা ৫০০ টাকা কাদি ও লেবু ৩ টাকা পিস বিক্রি হয়। এছাড়াও এখানে উৎপাদন করা হয় সজনে গাছের চারা। যা প্রতিটি বিক্রি হয় ৭৫ টাকায়।
তার বাগানে যে গাছগুলো লাগানো রয়েছে তা সবই উন্নতজাতের। এতে ফলন পাওয়া যাচ্ছে ভালো। যেমন- গোল্ডেন-৮ নতুন জাতের পেয়ারা। এর বৈশিষ্ট্য হল খুব ছোট অবস্থা থেকেই গাছে ফল হয় এবং ঘন পদ্ধতিতে গাছ লাগানো যায়। আর প্রতিটি কুশিতে অন্তত ৩টি ফল ধরে। এছাড়াও এই পেয়ারায় বিচি কম এবং সুস্বাদু।
এছাড়া সজনের জাতটি ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। দেড় থেকে দুই মাস পর পর ঢাকা থেকে ব্যবসায়ী এসে তার বাগান থেকে সজনে পাতা নিয়ে যায়। ফলে তার বাগানের ফল ও সজনে পাতা বাজারজাত করতে কোন সমস্যা হয়না। সবগুলো বাগান থেকে বিক্রি হয়ে যায়।
তৌফিকুল ইসলাম মিলন আরও বলেন, সফল কৃষক হওয়ার আকাঙ্খা থেকে এই সমন্বিত মিশ্র ফল বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। এই বাগানে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। সরকারের পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সহযোগি প্রতিষ্ঠান শতফুল বাংলাদেশ থেকে এ বাগান করতে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছে বলেও জানান তৌফিকুল।
স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা শতফুল বাংলাদেশ- এর নির্বাহী পরিচালক নাজিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ঋণ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে তৌফিকুল ইসলাম মিলনকে উদ্যোক্তা হতে আমরা সহযোগিতা করেছি। এছাড়াও মিলন গরু ও হাসের খামার করতে চান। সে ব্যাপারেও আমরা তাকে সহযোগিতা দিব। মিলনের দেখে যেন আরও উদ্যোক্তা তৈরী হয় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহী জেলায় প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে সমন্বিত মিশ্র চাষ পদ্ধতিতে ফল ও সবজির আবাদ হয়েছে। যা প্রতিবছর বাড়ছে।
তিনি বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চল জুড়ে ফল ও সবজির মিশ্র চাষের বিষয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। লাভজনক হওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফল ও সবজির মিশ্র চাষ পদ্ধতি।