আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহের সড়ক মহাসড়ক মানুষের জন্য ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে।
সড়কগুলোতে কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না অবৈধ যান চলাচল। প্রতিনিয়ত মানুষ মৃত্যু ঝুকি নিয়ে সড়কে চলাচল করছেন। নিরাপদে সুস্থ শরীরে বাড়ি পৌছাবে কিনা এমন কোন গ্যারান্টি নেই। যানবাহনে চড়ে এক অনিশ্চিত যাত্রার বলি হচ্ছে মানুষ।
গত ৬ মাসে ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৭১ জন। এরমধ্যে বেশির ভাগই মারা গেছেন অবৈধ যানবাহনের কারণে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকার পরও ঝিনাইদহের বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে পারেনি হাইওয়ে পুলিশ। বরং কথিত আছে অবৈধ যানবাহন মালিকরা মাসোহারা দিয়ে রাস্তায় এই যানবাহন চালাচ্ছেন। সড়ক মহাসড়ে দেদারছে অবৈধ যানবাহন চলাচল সেই সাক্ষ্য বহন করে। পুলিশ ও পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় গত ৬ মাসে ১৭ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৫ জন, কোটচাঁদপুরে ১৪ জন, মহেশপুরে ১১ জন, শৈলকুপায় ১২ জন ও কোটচাঁদপুরে ২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় সবচে বেশি ১৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে একই পরিবারের ৪ সদস্যসহ ৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে কোটচাঁদপুরের কাশিপুর নামক স্থানে। ঘটনার দিন কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের রুবেলের স্ত্রী রিমা খাতুন ডাক্তার দেখাতে কোটচাঁদপুর যান। তার সঙ্গে ছিল সন্তান রাফান ও শাশুড়িসহ দুই শিশু। পথের মধ্যে ফল ব্যবসায়ী আল-আমিন ইঞ্জিন চালিত ওই ভ্যানের যাত্রী হন। তারা কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর সড়কের কাশিপুর নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই দুই শিশুসহ তিনজন এবং পরে যশোর হাসপাতালে দুজন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরো দুইজনের মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসিকে গভীর ভাবে নাড়া দেয়। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় একাধিক মৃত্যুর মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার কয়ারগাছি স্থানে আব্দুর রাকিব ও শাকিল, কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ চিনিকলের সামনে স্বামী ছাবদার হোসেন ও স্ত্রী পারভিনা খাতুন, সদর উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামে ইমন ও আজিম, সদর উপজেলার আটলিয়া গ্রামে রিংকী খাতুন ও সাজেদুল ইসলাম, কালীগঞ্জের পিরোজপুর বটতলায় আবুল কালাম, শরীফা খাতুন ও অরো দাস এবং একই উপজেলার বেজপাড়া নামক স্থানে উজ্জল শেখ ও আমানুর রহমান নিহত হন। বায়েস নামে এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, তিনি কুষ্টিয়ার পোড়াদহ থেকে কাপড় কিনে ফেরার পথে হাইওয়ে পুলিশকে ২৫০০ টাকার ঘুষ দিনে। টাকা না দিলে থ্রিহুইলার আটকে রাখা হয়। থ্রিহুইলার, আলমসাধু, ভটভটি, নছিমন ও করিমন গাড়ির বেশির ভাগ চালক অভিযোগ করেন, তারা মাসিক দিয়ে সড়কে চলাচল করেন। এই টাকা মালিক পক্ষ দিয়ে থাকেন।
সুজন নামে এক ইজিবাইক চালক অভিযোগ করেন, রাস্তায় রাস্তায় তারা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও শ্রমিক সংগঠনের টাকা দিয়ে থাকেন। টাকা না দিলে গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। সংগঠন সড়ক দুর্ঘটনায় অকাতরে প্রাণ হারানোর বিষয়ে ঝিনাইদহ হাইওয়ে পুলিশের ওসি মিজানুর রহমান বলেন, সড়ক মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচলের বিষয়ে শুধু ঝিনাইদহে বন্ধ হলে হবে না। সারা দেশেই বন্ধ করতে হবে। এ জন্য সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয় কাজ করছে। তারপরও আমরা সড়কগুলো অবৈধ যান মুক্ত করতে কাজ করছি।
তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে সড়কে গত ৬ মাসে ১৫/১৬ জন মানুষ সড়ক দুঘর্ঘটনায় মারা গেছেন। সারা জেলায় গ্রামীন সড়কের দুর্ঘটনার হিসাব আমাদের কাছে নেই। ওসি মিজানুর রহমান বলেন, সড়ক মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে শুধু পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এই সেক্টরে যারা কাজ করেন তাদের সবাই একতাবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। ঝিনাইদহ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির সহকারী পরিচালক আতিয়ার রহমান জানান, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিআরটিএ সচেতনতামুলক কর্মসুচি চালিয়ে যাচ্ছে। তার দপ্তর প্রতি মাসেই চালকদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষন দিচ্ছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.