আমরা সকলেই জানি থানকুনি পাতার উপকারিতা রয়েছে অনেক। কিন্তু এই উপকারিতা পাওয়ার জন্য আমাদের প্রয়োজন সঠিক কার্যপ্রক্রিয়া। তাই আজ আপনাদের মাঝে আমরা থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব, চলুন তাহলে শুরু করি আজকের আলোচনা।
থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে থানকুনি পাতা কি? থানকুনি পাতাকে ল্যাটিন শব্দে Centella Aciatica বলা হয়। তবে গ্রাম অঞ্চলে এই পদ্ধতিকে সকলে থানকুনি পাতা হিসেবে চিনে থাকে।
থানকুনি পাতা হচ্ছে একটি ঔষধি গাছ। আর এই পাতা সঠিকভাবে সেবন করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দেহের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করে থাকে।
থানকুনি পাতার বিশেষ প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে সেবন করা হয় এবং বহু রোগ থেকে উপশম পাওয়া যায়।
থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম
থানকুনি পাতা খাওয়ার বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। তবে আপনারা রোগের কারণ বিশ্লেষণ করে থানকুনি পাতা বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন। যেমনঃ থানকুনি পাতার রস, ভর্তা, বরি ইত্যাদি। এছাড়া থানকুনি পাতা সংরক্ষণ করার জন্য আপনারা থানকুনি পাতা ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে এর পাউডার তৈরি করে নিতে পারেন।
পেটের পীড়া জনিত সমস্যায় থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। তবে গ্রাম অঞ্চলের মানুষ এখনও থানকুনি পাতার ভর্তা নিয়মিত খেয়ে থাকে।
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
থানকুনি পাতার উপকারিতা অনেক রয়েছে। তবে এর অপকারিতা নেই বললেই চলে। চলুন তাহলে জেনে থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কেঃ-
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে:
আমাদের প্রত্যেকের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, কারও কম কারও বেশি। কিন্তু আমরা এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের এলোপ্যাথিক এবং হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবন করে থাকি। আমরা যদি এ ধরনের ঔষধ থেকে বিরত হয়ে একটি ঔষধি গাছ থেকে ঔষধ গ্রহন করি তাহলে খুব উপকারে আসে।
তাই ওষুধ হিসেবে গ্যাস্ট্রিকের জন্য থানকুনি পাতা বিশেষ উপকার নিয়ে আসে। এটি আপনারা খুব সহজেই করতে পারবেন। আর এই থানকুনি পাতা সেবন করলে আপনার দেহের অন্য কোন অঙ্গপ্রতঙ্গের ক্ষতি করবে না।
থানকুনি পাতার রসের সাথে হাফ লিটার দুধ এবং সামান্য মিশ্রি একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে আপনাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। প্রতিদিন সকাল বেলা এই মিশ্রণ থেকে ১ থেকে ২ চামচ সেবন করলে আপনারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
কাশি রোদ:
যাদের অনেকদিন ধরে কাশি হচ্ছে কিন্তু সহজে তা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না তাদের জন্য থানকুনি পাতার রস অন্যরকম ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন ২ চা চামচ থানকুনি পাতার রস চিনির সাথে মিশিয়ে খেলে কাশি কমে যায়।
এই সেবন প্রক্রিয়া এক সপ্তাহ চালিয়ে গেলে শুকনো কাশি সহ অন্যান্য সকল কাশি জনিত সমস্যা দূর হয়ে যায়।
জ্বর কমায়:
আমরা সকলেই জানি যে এক ঋতু থেকে অন্য ঋতুতে প্রকৃতি পরিবর্তনের সময় জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যায়। আর এই সময় থানকুনি পাতার রস খেলে এ ধরনের জ্বর থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়।
তার জন্য এক চা-চামচ থানকুনি পাতার রস এবং এক চা-চামচ শিউলি পাতার রস একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে খেলে সেরে যায় এবং শরীরের দুর্বলতা কমে যায়।
আমাশয় প্রতিরোধ করে:
যাদের আমাশয় সমস্যা রয়েছে তারা যদি এক সপ্তাহ খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেয়ে থাকে তাহলে সারা জীবনের জন্য আমার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আর এই থানকুনি পাতার রসের সাথে সামান্য পরিমাণ চিনি মিশ্রিত করে প্রতিদিন দুই চামচ করে সেবন করলে পেটের যেকোন সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি:
আমরা নারীরা সকলেই ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের উপাদান ব্যবহার করে থাকি। আর এই অন্যতম উপাদান গুলোর মধ্যে থানকুনি পাতা মুখ্য ভূমিকা রাখে।
থানকুনি পাতায় রয়েছে অ্যামাইনো এসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি এসিড এবং ফাইটোকেমিক্যাল। যা ত্বকের পুষ্টি বজায় রাখে এবং ত্বকের বলিরেখা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। থানকুনি পাতা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করে থাকে।
চুল পড়া রোধ:
যাদের চুল অধিক পরিমাণে ঝরে পড়ে এবং নতুন চুল গজায় না তাদের জন্য থানকুনি পাতা অন্যতম ভূমিকা পালন করে। আর এই সকল সমস্যা সমাধানের জন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার থানকুনি পাতা বেটে মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখলে মাথার চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি:
প্রতিদিন সকালে থানকুনি পাতার রস খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কোথাও কেটে গেলে সেখানে থানকুনি পাতা বেটে লাগিয়ে দিলে অনেকাংশে সেই ক্ষত সেরে যায়।
থানকুনি পাতা কোথায় পাওয়া যায়
থানকুনি পাতা খুঁজে পাওয়া বর্তমানে খুব সহজ হয়ে পড়েছে। কারণ বর্তমানে বাজারে এবং বড় বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর গুলোতে থানকুনি পাতা খুব সহজেই কিনতে পাওয়া যায়। থানকুনি পাতার উপকারিতা এবং চাহিদা কে কেন্দ্র করে অনেকে থানকুনি পাতা চাষ করছে।
এছাড়াও গ্রাম অঞ্চলে থানকুনি পাতা হরহামেশাই খুঁজে পাওয়া যায়। গ্রাম অঞ্চলের বন জঙ্গলে এবং বাড়ির আঙিনাতে খুব সহজেই থানকুনি পাতা খুঁজে পাওয়া যায়। থানকুনি পাতার বিশেষ কোনো যত্ন করার প্রয়োজন হয় না এটি প্রকৃতির নিয়মে একা একা জন্মায় এবং খুব সহজেই পাওয়া যায়।
উপসংহার: থানকুনি পাতার উপকারিতা কোন বিকল্প নেই। আমাদের মানব দেহের সকল অঙ্গ প্রতঙ্গের যেকোনো রোগপ্রতিরোধ সম্পর্কিত সমস্যা থানকুনি পাতা কোনো জুড়ি নেই।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.