আনোয়ার হোসেন, স্টাফ রিপোটার : বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানিকৃত পণ্য লোড-আনলোডের কাজে ব্যবহৃত অধিকাংশ ক্রেন ও ফরক্লিপ দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে পড়ে থাকার কারণে বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়ীগন সঠিক সময়ে পন্যচালান খালাস নিতে পারছে না। এছাড়া হয়রানির শিকার হচ্ছে সিএন্ডএফ এজেন্টস ব্যাবসায়ী ও শ্রমিকগন।
জানা গেছে, বেনাপোল বন্দর থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও মালামাল লোড-আনলোড করার জন্য বন্দরের নেই কোন নিজস্ব ক্রেন-ফরক্লিপ ব্যাবস্থা। ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করানো হচ্ছে। একবার নষ্ট হয়ে গেলে পোর্ট কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা জানায় ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। এদিকে ঠিকাদার মেরামতের কোনো গুরুত্ব না দিয়ে মাসের পর মাস অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গ্রেড বেঙ্গল এন্টারপ্রাইজের কারনে দীর্ঘদিন যাবৎ ভারী পণ্য ওঠানামায় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীগনকে। পাশাপাশি পণ্য খালাস বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দেখা দিয়েছে পণ্যজট।
দেশের বেনাপোল বন্দর স্থল পথে ভারতের সাথে যে আমদানি -রফতানি বাণিজ্য হয়, তার বড় একটি অংশই দেশের শিল্পকারখানা স্থাপনের যন্ত্রাংশ, রেল-বিদ্যুৎ প্রকল্প ও সেতু-কালভার্ট নির্মাণের মালামাল। আর বেনাপোল স্হল বন্দরে ভারী পণ্য ওঠানামার কাজে ৫ বছরের চুক্তি করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গ্রেড বেঙ্গল এন্টারপ্রাইজ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারী মালামাল লোড-আনলোডের জন্য বেনাপোল বন্দরে কমপক্ষে ১৫টি নতুন ক্রেন ও ১০টি নতুন ফরক্লিপ প্রয়োজন। তবে ঠিকাদান প্রতিষ্ঠানটির মাত্র ৭টি পুরাতন ক্রেন ও ৮টি পুরাতন ফরক্লিপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল আছে মাত্র ১টি ক্রেন ও ১টি ফরক্লিপ। আর বাকি ১৩ টিই অচল।
এতে স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৭০০ ও অধিক ট্রাক পণ্য লোড-আনলোড হলেও এখন তা অর্ধেকের নিচে দাঁড়িয়েছে। ফলে পণ্য খালাস কম হওয়ায় বেনাপোল বন্দরে পণ্যজটের পাশাপাশি দেশের শিল্পকারখানায় উৎপাদন ও উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ী গন।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্রেন ও ফরক্লিপ পুরনো হওয়ায় অধিকাংশ সময়ই নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। বেনাপোল স্হলবন্দরের ঠিকাদার কর্তৃপক্ষকে বারবার অভিযোগ দিলেও সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।ভোগান্তিতে পড়া একাধিক ট্রাকচালক বলেন, বন্দরের ক্রেন ও ফরক্লিপ গুলা নষ্ট থাকায় সময় মতো পণ্য গন্তব্যে নিতে পারি না। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ক্রেন ও ফরক্লিপ অচল থাকায় পণ্য খালাস নিতে না পারায় বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়ে বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী বলেন, বারবার অভিযোগ জানালেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। কিন্তু সবচেয়ে বেশি রাজস্ব এই বেনাপোল বন্দর থেকে দেয়া হলেও বন্দরের সেবার মান বেহাল দশা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দরে প্রায় ৭ শতাধিক ট্রাক পণ্য লোড-আনলোড হয়। এসব পণ্যের মধ্যে প্রায় ৩০০ ট্রাক ভারী পণ্য রয়েছে, যা খালাস করতে ক্রেন ও ফরক্লিপের প্রয়োজন হয়।
এ বিষয়ে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক মোঃ মেহেরুল্লাহ জানায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বর্তমান সময়ে বিদ্যুৎ, রেল প্রকল্পের মালামাল বেশি আসছে। কিন্তু বেনাপোল বন্দরে চাহিদার তুলনায় এসব ভারী মালামাল লোড-আনলোডের জন্য ক্রেন ও ফরক্লিপ কম। তা ছাড়া এগুলো বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় বন্দরে পণ্যজট বেড়েছে। এদিকে অচল হয়ে পড়ে থাকা ক্রেন-ফরক্লিপ সারানোর জন্য বেনাপোল বন্দরের কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হলেও, কোনো প্রতিকার মিলছে না বলেও জানান তিনি।
তবে নানা অজুহাত দেখিয়ে গ্রেড বেঙ্গল এন্টারপ্রাইজের মেকানিক বাদশা মিয়া জানান, নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা ক্রেন ও ফরক্লিপের যন্ত্রাংশ জরুরিভাবে সংগ্রহ করতে না পারায় মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে পণ্য খালাসে বিঘ্ন ঘটছে। বিষয়টি জরুরিভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.