আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি পাকিস্তান রাশিয়া থেকে ছাড়ে কেনা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের প্রথম চালানের মূল্য চীনা মুদ্রা ইউয়ানে পরিশোধ করেছে। দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী মোসাদ্দেক মালিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এটি পাকিস্তান সরকারের জন্য বেশ বড় একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত কারণ এর আগে দেশটি তেল কেনার জন্য মার্কিন ডলার ব্যবহার করত। রাশিয়া থেকে হ্রাসকৃত মূল্যে জ্বালানি ক্রয় পাকিস্তানের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে।
পাকিস্তান এখন তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে, দেশটি বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে ঘাটতির কারণে আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এখন যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ এক মাসের নিয়ন্ত্রিত আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। চলতি বছরের প্রথম দিকে মস্কো ও ইসলামাবাদের মধ্যে হ্রাসকৃত দামে তেল কেনা নিয়ে চুক্তি হয়। সেই চুক্তির আওতায় রোববার তেলের প্রথম কার্গো করাচিতে পৌঁছায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে টেলিফোনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রী মোসাদ্দেক মালিক চুক্তির বিস্তারিত জানিয়েছেন। তবে তেলের দাম কিংবা কী পরিমাণ ছাড় পাকিস্তান পেয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘তেলের মূল্য চীনা ইউয়ানে পরিশোধ করা হয়েছে।’
পাকিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে প্রথম সরকারি পর্যায়ের এই চুক্তির আওতায় মোট এক লাখ টন অপরিশোধিত তেল কেনা হয়েছে। এই চুক্তিটি পাকিস্তান এপ্রিলে করেছে। এপ্রিলে দেওয়া এই ক্রয়াদেশের মধ্যে ৪৫ হাজার টন তেল করাচি বন্দরে পৌঁছে। বাকিটা আসছে বলে জানান মালিক। পাকিস্তান রিফাইনারি লিমিটেড (পিআরএল) প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করবে।
মালিক বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো এক-তৃতীয়াংশ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করা।’ পাকিস্তানের বেশির ভাগ অপরিশোধিত তেল সৌদি আরব এবং পরে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা হয়।
কেন চীনা মুদ্রা?
পাকিস্তানই একমাত্র দেশ নয় যারা চীনা মুদ্রায় বাণিজ্য করছে। বাংলাদেশও সম্প্রতি একটি রুশ প্রকল্পের জন্য ডলারের পরিবর্তে চীনা ইউয়ানে অর্থ প্রদান করা যায় কি না, সেই বিষয়ে ভাবছে। নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রাশিয়াকে চীনা মুদ্রায় ১১০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার পরিকল্পনার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো ডলারের আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে অন্য মুদ্রায় লেনদেন শুরু করার চেষ্টা করছে। ভারতও রুপী ব্যবহার করে রাশিয়ান অশোধিত তেল কেনার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল, কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি।
বর্তমানে, রাশিয়া ভারতের অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের বৃহত্তম সরবরাহকারী। কিন্তু এই সরবরাহ এখন বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ রাশিয়াকে যে পন্থায় অর্থ প্রদান করতে হবে সেটা নিষিদ্ধ করেছে আমেরিকা।
ভারতকে অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য রাশিয়াকে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার দিতে হবে। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে গত এক বছর ধরে এ অর্থ পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
ভারত আশঙ্কা করছে, তারা যদি অর্থ পরিশোধ করে তাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে। অন্যদিকে রাশিয়া রুপিতে পেমেন্ট নিতে প্রস্তুত নয়। ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলো রাশিয়ার ব্যাঙ্কগুলোতে ভোস্ট্রো অ্যাকাউন্ট খুলেছিল, যাতে রুপি দিয়ে তেল কেনা যায়। সমস্যা হলো ভারতের কাছে তেল বিক্রয় বাড়ানোর পর রাশিয়া অনেক রুপি পেয়েছে। কিন্তু রাশিয়া এখন রুপির পেমেন্টে আগ্রহী নয়।
ইউয়ান নিয়ে কোনো সমস্যা নেই কারণ রাশিয়া ক্রমাগত চীনের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে। চীন, পাকিস্তান, রাশিয়া সবাই লাভবান। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া এখন তার তেলের গন্তব্য ইউরোপ-আমেরিকা থেকে সরিয়ে অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
গত কিছুদিন ধরে চীন ও ভারতই দেশটির তেলের প্রধান ক্রেতা, এবার তার সঙ্গে পাকিস্তানও যুক্ত হলো।
ইসলামাবাদ পশ্চিমাদের দীর্ঘদিনের মিত্র। এদিকে পাকিস্তানের প্রতিবেশী ভারত আবার ঐতিহাসিকভাবেই মস্কোর মিত্র। তার মধ্যেও অপরিশোধিত তেলের এই চুক্তি তুমুল অর্থনৈতিক সংকটে পড়া পাকিস্তানের জন্য একটি নতুন পথ খুলে দিতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশেষজ্ঞ অতুল ভারতদ্বোয়াজ বলছেন ‘ডি-ডলারাইজেশন যে ক্যাম্পেইন শুরু করেছে রাশিয়া ও চীন এটা সফলও হতে পারে। চীনের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং এই মুদ্রা ব্যবহৃতও হবে।’
তার মতে, ‘রাশিয়া ভারতের সঙ্গে যেরকম সম্পর্ক ভালো রাখতে চায় তেমনি পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চাইছে। এসব দেশের সুসম্পর্ক বজায় থাকলে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া একটা শক্ত অবস্থানেই থাকবে।’
ইসলামাবাদ চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়া, আফগানিস্তান ও ইরানের সঙ্গে পণ্য বিনিময় বাণিজ্য পদ্ধতি শুরুর একটি অবকাঠামো দাঁড় করিয়েছে। একেও ডলারবিহীন পণ্য কেনাবেচার আরেকটি পথ খোলার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এসব পদ্ধতির মাধ্যমে পাকিস্তান পশ্চিম থেকে পূর্বে নির্ভরশীল হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সুত্র-- বিবিসি
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.