নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের পরে এবার বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তার প্রমাণের লড়াই। খুলনা সিটিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও বরিশালের প্রার্থী আছেন শঙ্কায়।
সোমবার বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। ইভিএমে এই দুই সিটিতে সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হবে। চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। গাজীপুরের মতো এই দুই সিটিতেও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন করে আবারও আস্থার প্রতিদান দিতে চায় ইসি।
রবিবার সকালে বরিশাল নগরের বান্দরোডস্থ জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে নির্বাচনি সামগ্রী বিতরণ শুরু হয়। দুপুরের পরে সকল কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম পৌঁছে যায়। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।
একইদিন খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স থেকে ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে নির্বাচনি সরঞ্জাম হস্তান্তর করা হয়। বিকালের মধ্যে সকল কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম পৌছে দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ইসি।
বিএনপি অংশ না নেওয়ায় দুই সিটিতেই সরকারি দলের প্রার্থীর সামনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তবে নিরবে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এখন নিজেরাই। এই নির্বাচনে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কিছুটা চিন্তামুক্ত থাকলেও বরিশালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন্দলে নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) বেশ চাপে। যদি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে দলের কেন্দ্রীয় অর্ধ ডজন নেতা বরিশালে ভোটের মাঠে সরব।
অপরদিকে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনেকটাই নির্ভার তালুকদার আব্দুল খালেক। সিটি নির্বাচনে ভোটের মাঠে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় এ সিটিতে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের মধ্যে। যদিও প্রচারণার শেষ দুদিনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের তৎপরতায় এ নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ অনেকটাই বেড়েছে।
সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে বরিশালে সাড়ে চার হাজার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসিটিবি। নগরীর ১২৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৬ টিই ঝূঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে বরিশাল সিটিতে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন।
এই সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন। প্রার্থীরা সবাই নিজ নিজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, জাকের পার্টির গোলাপফুল প্রতীকের প্রার্থী মো.মিজানুর রহমান বাচ্চু,টেবিলঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী কামরুল আহসান, হরিণ প্রতীকের মো.আলী হোসেন হাওলাদার, হাতি প্রতীকের মো.আসাদুজ্জামান।
অন্যদিকে খুলনা সিটি নির্বাচন ঘিরে পুরো নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনসহ র্যা ব পুলিশ ও আনসারের প্রায় দশ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৪১ জন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে কয়েকটিতে সহিংসতার আশঙ্কায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। খুলনা সিটিতে ৫ মেয়র ও ১৭৯ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দেবেন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ভোটার।
খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে যে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তারা হলেন- আওয়ামী লীগ সমর্থিত তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামী আন্দেলনের মাওলানা আব্দুল আউয়াল (হাত পাখা),জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল রহমান (টেবিল ঘড়ি)। মেয়র পদে ৫জন প্রার্থী ছাড়াও, ৩১টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৪জন এবং ১০টি সংরক্ষিত নারী আসনে ৩৯জনসহ মোট ১৭৩জন প্রার্থী কেসিসি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) বলেন, সবকিছু ম্যান টু ম্যান নির্ভর করে। বিজয়ী হলে বরিশালের উন্নয়ন করার নিশ্বয়তা আমি দিয়েছি। যার কারণে জনগণ আমাকে ভোট দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সেই সঙ্গে বিএনপির সমর্থকরাও মনে করছে আমাকে ভোট দিতে পারলে নগরবাসী সেবা পাবে। দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষ আমাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবে। আমি জয়ী হওয়ার আশাবাদী।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, মানুষ বিএনপিকে বিশ্বাস করে না। ভোটাররা কেন্দ্রে আসবে এবং যোগ্য প্রার্থীকে ভোটের মাধ্যমে জয়ী করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার উন্নয়নে যে পরিমাণ টাকা দিয়েছেন, তা ইতিহাসে বিরল। আমরা কাজ শুরু করেও করোনার জন্য দুই বছর পিছিয়ে গেছি। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। এই কাজ শেষ হলে খুলনা হবে তিলোত্তমা নগরী। সাধারণ ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ফলে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত হবে ।
রবিবার নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন গাজীপুরের নির্বাচনের চেয়েও ভালো হবে। খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রতিটি পদক্ষেপেই আমরা তীক্ষ্ণ নজর রাখছি। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। ভোটের দিনও আমরা সরাসরি সিসি ক্যামেরায় এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করব। আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করেছি। নির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.