নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস (ডিওজে) আমেরিকান ব্যাংকগুলিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশী আমেরিকান বা দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে এমন বাংলাদেশী নাগরিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য দিতে বলছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি সংস্থা বাংলাদেশি নাগরিকের সম্পত্তির তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। এই ধরনের পদক্ষেপগুলি ইতিমধ্যে সন্দেহ তৈরি করেছে। কারণ বেশ কয়েকজন মার্কিন আইনপ্রণেতা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ব্যক্তির ওপর ‘কঠোর নিষেধাজ্ঞা’ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।

ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস (ডিওজে) এর এমন পদক্ষেপ গ্রহণের পর থেকেই হঠাৎ আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে। যা অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি অবস্থান করছেন সৌদি আরবে। দেশটি থেকে একসময় রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ও আসতো সবচেয়ে বেশি। তবে সম্প্রতি রেমিট্যান্স পাঠানোর দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে দেশটি। সেই স্থান দখল করে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ কম প্রবাসী থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের শীর্ষ রেমিট্যান্স সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয়েছে। যা সন্দেহজনক বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। আর এই রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সৌদি থেকে ৩.৮৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এলেও চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৩.০৪ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.৮৭ বিলিয়ন ডলার, চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩.০৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে যারা যায় তাদের বেশিরভাগই হোয়াইট কালার জব করে। অনেকেই ঘরবাড়ি ও জমিজমা বিক্রি করে দেশ থেকে টাকা নিয়ে চলে যায়। অনেক শিক্ষার্থীও সে দেশে আছে। তারা সাধারণত দেশে টাকা পাঠাতে পারে না। কিন্তু এরপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে হঠাৎ রেমিট্যান্স আসা বাড়ছে। যা রহস্যজনক। তবে এই হঠাৎ রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়াকে অনেকে পাচারকৃত টাকা কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলছেন, সাধারণত আমেরিকা বা কানাড়াতেই বাংলাদেশিরা টাকা পাচার করে থাকে এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে। সুতরাং সেই পাচার হওয়া সেই টাকাই এখন রেমিট্যান্স হয়ে আসছে বলে কেউ কেউ ধারণা করছেন।

তারা বলছেন, রেমিট্যান্সের ওপর সাধারণত সরকার আড়াই শতাংশ ইনসেন্টিভ বা প্রণোদনা দিয়ে থাকে। কিন্তু এখন যে রেমিট্যান্স আসছে আর সেটা যদি হয় পাচার হওয়া টাকা তাহলে আড়াই শতাংশ ইনসেন্টিভ বা প্রণোদনা দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, পাচার হওয়া টাকা রেমিট্যান্স হয়ে দেশে আসছে কিনা কিংবা কেউ সেটার সুযোগ নিচ্ছে কিনা তা কর্তৃপক্ষকে আরও গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সুত্র : ইনসাইড বাংলাদেশ