আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের ভেতর থেকে সশস্ত্র একটি দল রাশিয়ার বেলগোরদ অঞ্চলে ঢুকে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে এবং তাতে সেখানকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা আহত হয়েছে বলে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। স্থানীয় গভর্নর ভিচেস্লাভ গ্লাদকোভ বলেছেন, গ্রাভোরোনস্কি সীমান্ত এলাকায় যারা হামলা করেছে, সেই নাশকতাকারীদের খুঁজতে শুরু করেছে রাশিয়ান বাহিনী। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলাকারীদের মধ্যে ৭০ জন নিহত হয়েছে এবং বাকিদের ইউক্রেনকে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এ ঘটনার দায় অস্বীকার করে ইউক্রেন দাবি করেছে, ঐ ঘটনার পেছনে রাশিয়ার দুটি আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরাই জড়িত।

গভর্নর ভিচেস্লাভ গ্লাদকোভ বলেছেন, ঐ ঘটনায় আট জন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে। একটি গ্রামে গোলা নিক্ষেপের পর দুই জন বাসিন্দাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরেকটি ঘটনায় গ্রেভোরন শহরে আহত হয়েছে তিন জন। সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি বাড়ি ও একটি প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাকর অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। গভর্নর জানিয়েছেন, ঐ এলাকায় সন্ত্রাসীদের খুঁজতে একটি পালটা অভিযান শুরু করা হয়েছে। যারা এই অভিযানে রয়েছেন, তাদের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যাতে পরিচয় যাচাই এবং যোগাযোগব্যবস্থায় নজরদারি করতে পারে।

বেলদোরদ অঞ্চলের যেসব ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখেছে বিবিসি ভেরিফাই। একটি ড্রোন থেকে তোলা ভিডিওতে বেলগোরদের দক্ষিণ সীমান্তের একটি চেক পয়েন্টের কাছাকাছি বেশ কয়েকটি সাঁজোয়া গাড়ি দেখা যাচ্ছে। সেই এলাকায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে, এমন ভিডিও পেয়েছে বিবিসি। এসব ভিডিও সাম্প্রতিক সময়ে ধারণ করা। কিন্তু সেখানে আসলে কী হচ্ছে, সেটা এসব ভিডিও দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

কিয়েভ জানিয়েছে, সেখানকার এসব ঘটনার পেছনে রাশিয়ার লিবার্টি অব রাশিয়া লেজিওন এবং দ্য রাশিয়ান ভলান্টিয়ার কর্পস জড়িত রয়েছে। ইউক্রেনভিত্তিক রাশিয়ান মিলিশিয়া বাহিনী লিবার্টি অব রাশিয়া লেজিওন একটি টুইটে জানিয়েছে, তারা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উত্খাত করতে রাশিয়ার ভেতরে কাজ করছে। তারা সীমান্ত শহর কোজিঙ্কা ‘পুরোপুরি স্বাধীন’ করেছে এবং তাদের অগ্রবর্তী দল গ্রেভোরন শহরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। তবে পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার বার্তা সংস্থাগুলোকে বলেছেন, নাশকতাকারী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তাদের আসল উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনের বাখমুত শহর থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেওয়া, যে শহরটি অনেক মাস ধরে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্যবাহিনী দখল করেছে।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ইউরিক সাক মন্তব্য করেছেন, এসব হামলার পেছনে রাশিয়ার নাগরিকেরাই রয়েছে, যারা সে দেশের সন্ত্রাসবাদী শাসকদের ওপর বিরক্ত। তাদের স্বাগত জানালেও বিবিসি রেডিও ফোরের ওয়ার্ল্ড টুনাইট অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ঐ হামলাকারীদের তার দেশে সহায়তা করছে কি না বা আশ্রয় দিচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত বা নাকচ কোনোটাই করতে পারবেন না। সর্বশেষ এসব ঘটনা এমন সময়ে ঘটল, যখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বাহিনী পালটা আক্রমণ শুরু করতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মস্কো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু করার পর বেলগোরদ এবং আরো কিছু রাশিয়ান এলাকা প্রায়ই গোলা বা ড্রোন হামলার মুখে পড়ছে। এজন্য ইউক্রেনের গোলন্দাজ বাহিনীকে দায়ী করছে রাশিয়ান বাহিনী, যদিও ইউক্রেন বরাবরই রাশিয়ান ভূখণ্ডে কোনো ধরনের নাশকতা বা হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এদিকে সাবেক রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহ পরমাণু অস্ত্রের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তিনি বেলগোরদে হামলায় ইউক্রেনের অস্বীকারকে মিথ্যা বলে উল্লেখ করেছেন।

‘পুতিনের শাসনামল দুর্বল হওয়ার লক্ষণ নেই’

জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডির প্রধান ব্রুনো কাল বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার সমাজে বিতর্ক হলেও সেটি পুতিন সরকারের জন্য কোনো হুমকি নয়। যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার যথেষ্ট জনবল ও অস্ত্র আছে বলেও জানান তিনি। ব্রুনো কাল বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের শাসনামল দুর্বল হয়ে পড়ার কোনো লক্ষণ তিনি দেখছেন না। বার্লিনে ফেডারেল একাডেমি ফর সিকিউরিটি পলিসির এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা পুতিনের ব্যবস্থায় কোনো ফাটল দেখছি না। জার্মানির গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, যুদ্ধের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সাধারণ মানুষ যে সমালোচনা করছে, সেটি রাশিয়ার সমাজে নিয়মিত হওয়া বিবাদের মতো। এটি পুতিনের শাসনামলের জন্য হুমকিস্বরূপ নয়। নতুন নিয়োগ পাওয়া রুশ সৈন্যদের কথা উল্লেখ করে কাল বলেন, রাশিয়া এখনো দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম। রাশিয়ার যথেষ্ট অস্ত্রও আছে বলে জানান তিনি। তবে সামরিক বাহিনীর দক্ষতাসহ কিছু বিষয়ে রাশিয়ার দুর্বলতা আছে বলেও মন্তব্য করেন জার্মানির গোয়েন্দাপ্রধান। —বিবিসি ও ডয়চেভেলে