আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহে পিতৃত্বের অধিকার চেয়ে মারিয়া নামে ৬ষ্ঠ শ্রেনীর এক ছাত্রী সংবাদ সম্মেলন করেছে। মা মোছা: রোকসানা খাতুনকে সাথে নিয়ে রোববার (পহেলা মে) ঝিনাইদহ প্রেসক্লাকে আসেন মারিয়া।
এক আবেগঘন পরিবেশে কাঁদতে কাঁদতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর নারায়নপুর এলাকার মেহেদী হাসান বাবুর ১৩ বয়সী কন্যা মারিয়া খাতুন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, যে বয়সে একটি মেয়ে বাবা-মা, দাদা-দাদীর আদর স্নেহে মানুষের মতো মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠার কথা সেই বয়সে আমাকে মায়ের আচল ধরে পিতৃত্বের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
মারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে জানায় আমার পিতা মো. মেহেদী হাসান বাবু নেশাগ্রস্থ মাদকসেবী। আমার দাদী মোছা: আফরোজা বেগম ও আমার সৎ দাদা পল্লী চিকিৎসক মতিয়ার রহমান মতি আমাকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে জন্মগত কুৎসা রটানোসহ অত্যাচার, নির্যাতন, কুরুচিপুর্ন এবং আপত্তিকর অপবাদ প্রচার করে আমার পিতার পরিচয় অস্বীকার করছে। তারা আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। মারিয়ে জানায়, তার পিতা মেহেদী হাসান বাবুর সাথে মায়ের ২০০৯ সালে বিয়ে হয়। এরপর ওই বছর অক্টোবরে তার জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে পিতা মেহেদী বাবু মায়ের উপর শারীরিক ও মানুষিক অত্যাচার করে এসেছেন। আমার আব্বু, দাদি ও সৎ দাদার কথামতো এসব অন্যায় কাজ করে গেছেন। এখন আমার বুদ্ধি হয়ে দেখছি নানাভাবে আমার মাকে তারা নির্যাতন করছেন। এখন আমার জন্ম নিয়ে নোংরা খেলা শুরু করেছে। আমি এখন ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ি। এতোদিন পরে এসে আমাকে সন্তান হিসেবে অস্বিকার করছে। মারিয়া জানায় আমার দাদা খাদেমুল ইসলাম একজন ডাক্তার ছিলেন। আর আমার দাদীর বর্তমান স্বামী মতিয়ার রহমান মতি তিনি ছিলেন দাদার ওষুধের দোকানের কর্মচারী এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে আমার দাদার বাড়িতেই থাকতেন। আমি শুনেছি যেদিন আমার দাদা মারা যায় ঐদিন বাড়িতে আমার সৎ দাদা মতিয়ার রহমান আর আমার দাদা একাই ছিলেন। আর কেউ ছিলনা। সেদিনই হঠাৎ করে আমার দাদা খাদেমুল ইসলাম মার যায়। তার কিছুদিন যেতে না যেতেই আমার দাদী মতিয়ারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর সৎ দাদা মতি আমার দাদার ফার্মেসি দখল করেন।
মারিয়া জানায়, আমি পরিস্থিতির শিকার হয়ে এখান সবকিছু প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছি। আমার দাদি আফরোজা বেগম বিভিন্ন সময়ে বলতেন আমি যদি বাড়ি থেকে বেড় না হই তাহলে সৎ দাদার মাধ্যমে শ্রীলতাহানি করাবে। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্তেও আমার লেখাপড়া, খাওয়-দাওয়া পোশাকসহ কোনো খরচ তারা বহন করছে না। একপর্যায়ে আমার মা পারিবারিব সুরক্ষা আইনে মামলা করেন। এ মামলায় রায়ও আমাদের পক্ষে আসে। খোরপোষের মামলা চলাকালে আমার আব্বু কোর্টে উঠে আমাকে সন্তান হিসেবে অস্বিকার করেন। এরপর আদালত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আমাদের ঢাকা সিআইডি ব্যুরোতে পাঠায়। ডিএনএ টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। কোর্ট তখন এ মামলায়ও আমাদের পক্ষে রায় দেয়। মারিয়া জানায়, আমি ও আমার মা এখন নিৎস্ব রিক্ত। কোথাও দাড়ানোর ঠাই নেই। এক প্রকার রাস্তায় রাস্তায় বেড়াচ্ছি। মারিয়া জানায়, আমার আব্বু এতোটাই নিষ্ঠুর যে, তিনি তাদের বৈবাহিক জীবনের একান্ত ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকী দিচ্ছেন। শিশু মারিয়া পিতার অধিকার এবং পৈতৃক উত্তরাধীকারী হিসেবে ন্যায্য হিস্যা, পিতার বসতবাড়িতে থেকে পড়াশুনাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ বিষয়ে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান বাবু ও তার মায়ের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদেরকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে সৎ দাদা মতিয়ার রহমান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বিকার করে জানান, তিনি কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ি সকল দায়িত্ব গ্রহন করবেন। এ বিষয়ে সাধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দিন ও সাগান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মোজাম্মেল হোসেন মারিয়ার দাবি ও অভিযোগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, শিশু মারিয়ার যৌক্তিক দাবী আদায়ে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.