জাফর আহমেদ : সন্দ্বীপে গ্রাহকের প্রায় ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ‘ফেয়ার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক নাদিম শাহা আলমগীরের বিরুদ্ধে। তিনি সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা। দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে তার এসব কর্মকাণ্ডে দলের ভাবর্মূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে নিম্ন আয়ের শতশত মানুষের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে টাকা জমা নেন নাদিম শাহ। তিনি ২০১১ সাল থেকে নানা কৌশলে গ্রাহকদের থেকে অর্থ হাতিয়ে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। প্রতারিত গ্রাহকরা টাকা ফেরত চাইলেও নাদিম শাহা ও তার ভাইদের ক্ষমতার কাছে তারা অসহায় হয়ে পড়েন। সেই থেকে এখনও টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে দীর্ঘ এক যুগেও গ্রাহকের ১৮ কোটি টাকা ফেরত না দিয়ে বীরদর্পে ঘুরে বেড়িয়ে রাজনীতি করে যাওয়া নাদিম শাহা এবার সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
তবে সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটির এই সদস্য প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করায় দলের ভাবর্মূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সন্দীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলীয় পদপদবী ব্যবহার করে শতশত অসহায় দিনমজুর মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে প্রভাব খাটিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন নাদিম শাহা আলমগীর। দলের পদবী ব্যবহার করে এসব অপর্কম করে দলের সুনাম নষ্ট করছেন তিনি। এখন আবার তিনি সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন।
প্রতারণার শিকার ভুক্তিভোগীদের অভিযোগ, টাকা ফেরতের দাবিতে বিভিন্ন সময় গ্রাহকরা দেনদরবার করলে নাহিদ শাহ আলমগীর নানা তালবাহানা করেন। গ্রাহকদের পাওনা থেকে নামমাত্র কিছু টাকা পরিশোধ করে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির চারটি শাখায় প্রায় এক হাজার গ্রাহক ছিল। এসব গ্রাহক এখনও প্রায় ১৮ কোটি টাকা পাওনা আছেন প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে। এই টাকা ফেরত না দিয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেও কিছুই হয়নি নাদিম শাহার।
সমাজের নিম্নশ্রেণির স্বল্প আয়ের এসব মানুষ সর্বশান্ত হয়ে অসহায়ের মতো ঘুরলেও প্রতিকার পাননি। উল্টো বিভিন্ন হুমকি পেয়েছেন সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহানের ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা নাদিম শাহা ও তার ভাইদের কাছ থেকে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তাদের বিরুদ্ধে অসহায় মানুষগুলো কোনো ব্যবস্থা নিতে সাহস পাননি। জীবনের শেষ সম্বল ফেরত পেতে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ভুক্তভোগী ইদ্রিছ আলম বলেন, আমি ২০ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম। কাগজ আছে। আমাকে ১২ লাখ টাকা দিয়েছে। আরও আট লাখ টাকা পাওনা আছি। এক বছর আগে টাকা চাইতে গিয়েছিলাম, হুমকি ধামকি দিয়েছে।
আরেক ভুক্তভোগী রহিমা বেগম। তার স্বামী বলেন, ফেয়ার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায়ের কাছে টাকা সঞ্চয় করেছিলাম। কিন্তু প্রতারণার স্বীকার হয়েছি। টাকা চাইতে গেলে মারধর করতে আসে। এলাকায় থাকতে দেবে না বলে হুমকি দেয় নাদিম শাহ আলমগীর ও তার ভাইয়েরা।
ফেয়ার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায়ের শাখার দায়িত্বে ছিলেন সফিক কমিশনার নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমি একটা শাখার দায়িত্বে ছিলাম। কিন্তু আমি তো জানতাম না নাহিদ শাহা আলমগীর মানুষের টাকা আত্মসাৎ করবে। আমি নিজেও লাখ টাকা রেখেছি এবং আমার আত্নীয়স্বজন অনেকের টাকা রেখেছিলাম। কিন্তু এখন তো সবই গেছে। বার বার নাহিদ শাহার কাছে অনুরোধ করে টাকা ফেরত পাচ্ছি না। আর আত্নীয়স্বজনরাও চাপ দিচ্ছেন। নাদিম শাহ আলমগীর ও তার তিনভাই এবং তাদের বাবা এই প্রতিষ্ঠানের মালিক। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিতে পারছি না ভয়ে। অভিযোগ দিলে আমাদের উপর নির্যাতন করা হবে।’
আরেক ভুক্তভোগী কবির সুমন বলেন, ‘আমি এবং আমার আত্নীয়স্বজন মিলে চার-পাঁচ লাখ টাকা রেখেছিলাম। সব কাগজপত্র আছে। বাড়তি টাকা তো দূরের কথা, আসল টাকাও ফেরত পাইনি।
এছাড়া ভুক্তভোগী হুমায়ুন কবির, দেলোয়ার হোসেন ও আশরাফ উল্যাও জানালেন ফেয়ার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায়ের মালিক নাদিম শাহার ভয়ংকর প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের কথা। তারাও একভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তারা জানান, তাদের মতো শতশত লোকের টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিয়েছেন নাদিম শাহা। তার কাছে টাকা চাইতে গেলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখান, হুমকি-ধামকি দেন।
এই বিষয় জানতে চাইলে নাদিম শাহ আলমগীর বলেন, ফেয়ার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলাম, কিন্তু মালিক ছিলাম না। আমি ছিলাম ম্যানেজার। আর যাদের টাকা নেওয়া হয়েছে, তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আমার অন্যান্য ভাইয়েরা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত। মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমার নামে এসব মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সূত্র : ঢাকা টাইমস
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.