ঝিকরগাছা অফিস : যশোরের ঝিকরগাছা পৌর সদরের মোবারকপুর গ্রামের আয়েশা ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (৫ মার্চ) রাতে এই ঘটনা ঘটেছে। ইতিপূর্বেও ঐ ক্লিনিকে সিজার অপারেশনের সময় আরও রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর ক্লিনিক বন্ধ করে মালিক আত্মগোপন করেছে।
ঘটনা সুত্রে জানা যায়, যশোর সদরের দেয়াড়া ইউনিয়নের আলমনগর গ্রামের আব্দুল মালেকের পুত্র আশা হোসেনের স্ত্রী ইয়াসমিন (১৮) গর্ভবতী অবস্থায় ঝিকরগাছা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের ডহর মাগুরা গ্রামে তার পিতা শামিমের বাড়িতে অবস্থান করছিলো। রবিবার রাতে প্রসব বেদনা শুরু হলে ঐ গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার জাকিরের পরামর্শে তাকে ঝিকরগাছা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড মোবারকপুর নিমতলায় অবস্থিত আয়েশা ক্লিনিকে রাত ৯ টায় ভর্তি করা হয়। রাত দশটায় ডাক্তার নাজনীন সুলতানা এবং আবু সায়েম উক্ত ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পুত্র সন্তান ডেলিভারি করান। অপারেশন থিয়েটারে রোগীর প্রেশার নেমে যায়। ধারণা করা হচ্ছে অপারেশন টেবিলেই রোগী মারা যায়। ঐ অবস্থায় ক্লিনিক মালিক এবং ডাক্তারগন রোগীর লোককে বলেন রোগীর অবস্থা খারাপ, আই সি ইউ তে নিতে হবে। কৌশলে তারা রোগীকে ক্লিনিক থেকে বের করে খুলনার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়। পথিমধ্যে রাজারহাট নামক স্থানে পৌছালে রোগীর স্বজনরা বুঝতে পারে সে আর বেঁচে নেই। রাত ১২টার পর মৃতদেহ বাবার বাড়ি পরে রাত তিন টার সময় শশুরবাড়ি আলমনগর নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার (৬ মার্চ) বেলা ১২টায় উক্ত মরদেহ কবরস্থ করা হয়েছে।
নিহত ইয়াসমিনের বাবার বাড়ি ডহর মাগুরা গিয়ে দেখা যায় পাড়া প্রতিবেশীর ভিড়। তার মা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার কোল যারা খালি করেছে আল্লাহ যেন তাদের কোলও খালি করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্লিনিক মালিক মাসুদ পারভেজ বলেন, রোগীর অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিলো। অপারেশনের পর ডাক্তারের পরামর্শে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে রেফার্ড করা হয়। পথিমধ্যে রোগী মারা গেছে।
অপারেশন করা এনেস্থিসিয়া ডাক্তার আবু সায়েম বলেন, রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। এছাড়া অপারেশন থিয়েটারে লোকবল কম ছিলো। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকা স্বত্বেও এরকম জটিল রোগী কেনো অপারেশন করলেন এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। উল্লেখ্য সিজারিয়ান অপারেশন করা মহিলা ডাক্তার নাজনীন সুলতানা আবু সায়েমের স্ত্রী। এই ডাক্তার দম্পতি বিভিন্ন ক্লিনিকে অনকলে অপারেশন করে বেড়ান।
ঝিকরগাছা থানা অফিসার ইনচার্জ সুমন ভক্ত বলেন, গতকাল রাত একটার সময় ক্লিনিকে রোগীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সেখানে পুলিশ ফোর্স পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ক্লিনিক বাইরে থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।
ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রশিদুল আলম বলেন, ঘটনা শুনেছি। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোরের সিভিল সার্জন বিমল কান্তি বলেন, ক্লিনিকে রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। ঐ ক্লিনিকের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।
উল্লেখ্য এর আগেও ঝিকরগাছার বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগী মৃত্যুর অনেক ঘটনা ঘটলেও বিদ্যমান প্রশাসন কয়েকদিনের জন্য ক্লিনিক বন্ধ রাখা ছাড়া কাউকে দৃশ্যমান কোনো শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি। ফলে ব্যাঙের ছাতার মতো ঝিকরগাছার আনাচে কানাচে নাম সর্বস্ব শতাধিক ক্লিনিক গড়ে উঠেছে এবং কোনোরকম সুযোগ সুবিধা না থাকা স্বত্বেও অপেশাদার ডাক্তারের মাধ্যমে অপারেশন করাতে গিয়ে তারা রোগী মেরে ফেলছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.