ঢাকা অফিস : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বছরের অক্টোবর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ বা অর্ন্তবর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। নতুন বছরের শুরু থেকেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন করছে দলটি।

গত বছর অক্টোবর মাসে দাবি আদায়ে রাজধানীতে এলাকাভিত্তিক সমাবেশ শুরু করে বিএনপি। ওই সময় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর এর মধ্য দিয়ে রাজপথের কর্মসূচিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক শক্তি।

এরপর দাবি আদায়ে নভেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশ শুরু করে বিএনপি। সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ ডাকে দলটি। পরে ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে জনসভার মধ্যে দিয়ে সারাদেশে সমাবেশ শুরু করে আওয়ামী লীগ। তারপর থেকে বিএনপির কর্মসূচির দিনে মাঠে দেশজুড়ে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালন শুরু করে আওয়ামী লীগ।

ক্ষমতাসীন দলের এসব কর্মসূচির নাম দেয়া হয় ‘বিএনপি-জামায়াত এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সন্ত্রাস ও ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ’। কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি না থাকলেও বিএনপির কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। তবে দলের এসব কর্মসূচিকে ‘পাল্টা কর্মসূচি’ বলতে নারাজ আওয়ামী লীগ নেতারা।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রাজপথে আন্দোলনের নামে সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে বিএনপির। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের পদত্যাগসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছেন দলটির নেতারা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডেড ইস্যু হয়ে যাওয়া ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ আর ফিরে আসবে না। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- এ বিষয়টি বিএনপি নেতারাও জানেন। তাই দাবি আদায়ে কর্মসূচির নামে আবারো আগুন সন্ত্রাস ফিরে যেতে পারেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এ অবস্থায় দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় মাঠে থাকতে হবে আওয়ামী লীগকে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজপথে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সামনের দিনেও বিএনপির কর্মসূচির পাশাপাশি দলীয় কর্মসূচি পালনে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী বছরে বিএনপির আন্দোলনের জন্য মাঠ ফাঁকা রাখবে না দলটি।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে যেকোনো উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দলকে প্রস্তুত রাখতে চান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে দলের কার্যনির্বাহী কমিটি ও সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে সুস্পষ্ট নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। বিএনপির কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডসহ সকল ক্যাম্পাসে সতর্ক পাহারার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে, জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-ওয়ার্ড সকল জায়গায় সতর্ক পাহারায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সর্বশেষ ২৮ জানুয়ারি, শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাড্ডার সুবাস্তু মার্কেটের সামন থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। ওইদিন সকালে রাজধানীর উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ ও সমাবেশ করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। বিকেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে নেয়া হয়েছে ৩০ জানুয়ারি। এছাড়া ওইদিন সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।

এদিকে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত দলের নেতা-কর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

২৭ জানুয়ারি, শুক্রবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কর্মসূচি, গণসংযোগ এবং সতর্ক অবস্থানে থাকা। আমাদের কর্মসূচিতে কোনো প্রকার বিরতি থাকবে না। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত, আগুন-সন্ত্রাসের যেসব ঘটনা মাঝে মাঝে দেখা দেয়- এসব ঘটনার বিরুদ্ধে আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিজয়ের মাস ডিসেম্বর- ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বিবার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছে, এই দেশে তত্ত্বাবধায়ক আর কোনোদিন হবে না। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কারা ক্ষমতায় আসবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় মানুষের কাছাকাছি আছে। আন্দোলনের নাম করে কেউ সন্ত্রাস, সহিংসতা করার চেষ্টা করলে জনগণ তাদের রুখে দাঁড়াবে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী বিবার্তাকে বলেন, বিএনপি আগেও আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য করা তাদের স্বভাব। তাদের নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আমরা বিভিন্ন সময়ে সভা-সমাবেশ করেছি। মিছিল, মিটিং আমাদের সবসময়ই করতে হয়।

তিনি বলেন, কেউ সভা, সমাবেশের নাম করে নৈরাজ্য করলে আমরা তার জবাব দেয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছি। তারা (বিএনপি) কোনো সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের পথ বেছে নিলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে।

শান্তি সমাবেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, আর এক বছর পর জাতীয় নির্বাচন। বিএনপি আন্দোলনের নামে দেশে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তারা যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না করতে পারে, তার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি বলেন, সমাবেশের নাম করে কেউ নাশকতা, সন্ত্রাস বা জনগণের জানমালের ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য আমরা সবসময় সতর্ক আছি।