রাজনীতি | তারিখঃ জানুয়ারি ৪, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 25325 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাঙালি জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্ণ করল আজ। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম, গৌরব, ঐতিহ্য ও সাফল্য নিয়ে ৭৬ বছরে পদার্পণ করল দেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন।
ছাত্রলীগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে। প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’। স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামধারণ করে। শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির পতাকাবাহী ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে পরিচিত।
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দেশের সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর তথা প্লাটিনাম জয়ন্তী পালনের জন্য বছরব্যাপী কর্মসুচিও হাতে নিয়েছে সংগঠনটি।
ছাত্রলীগ দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, আটান্নের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ষেষট্টির ৬ দফার পক্ষে গণঅংশগ্রহণের মাধ্যমে বাঙালির মুক্তির সনদের দাবিকে প্রতিষ্ঠা করে।
এরপর ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা, সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ এবং একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পরাধীন বাংলায় লাল সবুজের পতাকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ছাত্রলীগ।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অংশ নেয় ছাত্রলীগ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ঝিমিয়ে পড়ে স্বাধীনতার চেতনা ও গণতান্ত্রিক ধারা।
১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) দেশে ফিরে স্বাধীনতার চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক ধারা পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের সূচনা করেন। নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনন্য ভূমিকা পালন করে ছাত্রলীগ।
প্লাটিনাম জয়ন্তী ঘিরে বছরব্যাপী কর্মসূচি
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বছরব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি জানান, বছরব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে মূল অনুষ্ঠানগুলো পালন হবে আজ ৪ জানুয়ারি থেকে আগামী ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। এছাড়া অন্য কর্মসূচিগুলো সুবিধা মতো সময়ে পালন করা হবে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ বুধবার সকাল ৬টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডিস্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন। বিকাল ৩টায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দুদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দিন শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় (৬ জানুয়ারি) শোভাযাত্রা করা হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শোভাযাত্রা উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
এছাড়া ৫ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও সংগৃহীত রক্ত বিতরণ। শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হবে।
এছাড়া কিছু কর্মসূচি বছরজুড়ে সুবিধাজনক সময়ে পালিত হবে। এর মধ্যে আছে—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অনাবাদি জমিতে শাক-সবজি-ফল চাষ, মাছ ও গৃহপালিত পশুপালন ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ।
প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজ’ শীর্ষক মতবিনিময়; কনসার্ট ফর স্মার্ট বাংলাদেশ আয়োজন; বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পুনর্মিলনী; ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ: গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৫ বছর’ শীর্ষক স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ আইডিয়া কনটেস্ট’ আয়োজন; সকল সাংগঠনিক ইউনিটের দলীয় কার্যালয়ে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা; উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক প্রতিযোগিতা ও জাতীয়ভাবে ‘স্মার্ট ইয়ুথ ক্যাম্প’ আয়োজন।
দেশরত্ন শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়ে ‘শর্ট ফিল্ম প্রতিযোগিতা’ আয়োজন; বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘ডেভেলপমেন্ট কুইজ’ আয়োজন; নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও শেখ হাসিনা’ শীর্ষক বক্তব্য প্রতিযোগিতা।
‘সজিব ওয়াজেদ জয় প্রোগ্রামিং কনটেস্ট’ আয়োজন’; স্মার্ট বাংলাদেশ’ ও ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস’ এর উপর আন্তর্জাতিক একাডেমিক কনফারেন্স; ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ অলিম্পিয়াড; দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরস্কারপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চা-চক্র এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: আওয়ার কান্ট্রি, আওয়ার ড্রিম’ শীর্ষক পোস্টার প্রেজেন্টেশনসহ অন্যান্য কর্মসূচি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তরুণ প্রজন্ম ও ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে দৃঢ়চিত্তে উচ্চারণ করছে, দেশমাতৃকার প্রয়োজনে অতীতের ন্যায় আগামীতেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সকল অপশক্তি, মৌলবাদী-জঙ্গীগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, পেট্রোল বোমা ও অগ্নি সন্ত্রাস রুখে দিতে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও মানুষের জানমাল রক্ষার্থে, শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্ন শিক্ষাজীবন ও নিরাপদ ক্যাম্পাস বজায় রাখতে জীবন উৎসর্গ করতেও বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি প্রজন্মে, প্রতিটি তারুণ্যে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অনুভূতিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শ্রেষ্ঠতম স্থানে অবস্থান করেছে, করছে এবং আগামীতেও অবধারিতভাবে করবে। তাই, ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করে শেখ হাসিনার পরিকল্পিত স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিবে ছাত্রলীগ, ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে এটিই আমাদের সংকল্প।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্তিত ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবীর শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পী ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডুসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা ।