অজানা ডেস্ক : পোভেগ্লিয়া প্লেগ আইল্যান্ড। ভেনিস থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে রয়েছে একটি ছোট পরিত্যক্ত দ্বীপ। কিন্তু এই দ্বীপেই এক সময়ে বাস ছিল বহু মানুষের। কিন্তু সেই দ্বীপ এখন ‘ভূতুড়ে’। স্থানীয়দের দাবি, রাত ঘনালেই নাকি ওই দ্বীপে ভূতের উৎপাত শুরু হয়। পোভেগ্লিয়া প্লেগ আইল্যান্ড।

একটি ছোট খাল পোভেগ্লিয়া দ্বীপকে দুটি পৃথক অংশে বিভক্ত করেছে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, প্রথম ৪২১ সালে এই দ্বীপের উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৩৭৯ সালে বাসিন্দারা যুদ্ধের ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান।

মনে করা হয়, ছোট হওয়ায় এবং সহজে দৃষ্টিগোচরে না আসার কারণে নেপোলিয়ন পোভেগ্লিয়া দ্বীপকে বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতেন। লোককথা অনুযায়ী, এই দ্বীপে অস্ত্র সংরক্ষণ করে রাখতেন নেপোলিয়ন।

এর পর আবার ১৭৭৬ থেকে আবার এই দ্বীপকে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন ভেনিস প্রশাসন। এর পর ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দ্বীপটি হয়ে ওঠে প্লেগ এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের জন্য একটি নিভৃতবাস কেন্দ্র বা ‘লাজারেটো’।

পরে সেই নিভৃতবাস কেন্দ্রকে পরিণত করা হয় একটি মানসিক হাসপাতালে। কিন্তু ১৯৬৮ সালে হঠাৎ করেই ওই মানসিক হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। রাতারাতি খালি করে দেওয়া হয় ওই দ্বীপ।

কিন্তু কেন তড়িঘড়ি দ্বীপ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন? এ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে একাধিক লোককথা।

প্রচলিত রয়েছে যে, ছোট এই দ্বীপটিতে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজারেরও বেশি সংক্রমিত মানুষকে মরণাপন্ন অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে নগণ্য সংখ্যক মানুষ সুস্থ হয়ে ফিরে এলেও বেশির ভাগই ওই দ্বীপে মারা গিয়েছেন।

এ-ও প্রচলিত রয়েছে যে, পোভেগ্লিয়া দ্বীপের অর্ধেক মাটি নাকি মানব দেহাবশেষে থেকে তৈরি। সম্প্রতি পোভেগ্লিয়া কাছের লাজারেত্তো নুভো এবং লাজারেত্তো ভেচিও দ্বীপে গণকবর পাওয়া গিয়েছে।

১৯২২ সালে পোভেগ্লিয়াতে একটি মানসিক হাসপাতাল খোলা হয়েছিল। স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, সেই মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসক হিসাবে যোগ দেন এক রহস্যময় মানুষ।

ওই চিকিৎসক নাকি ধীরে ধীরে হাসপাতালের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। অভিযোগ উঠেছিল, সকলের অগোচরে কাছের কয়েক জন শাগরেদকে নিয়ে মানসিক রোগীদের উপর বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন ওই চিকিৎসক।

সেই পরীক্ষা চালাতে গিয়ে নাকি মানসিক রোগীদের উপর ব্যাপক নির্যাতন চালাতেন ওই চিকিৎসক। এর ফলে অনেক রোগীর মৃত্যুও হয়। মৃত্যুর পর রোগীদের দেহ মানসিক হাসপাতালের মিনার থেকে দূরে ছু়ড়ে দেওয়া হত। দেখে মনে হত যেন, মিনার থেকে পড়ে গিয়ে ওই রোগীদের মৃত্যু হয়েছে।

বেশ কিছু বছর এ রকম চলার পর হাসপাতালটি হঠাৎই ১৯৬৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। লোককথা অনুযায়ী, ওই মানসিক হাসপাতালে ‘তেনাদের’ উৎপাত শুরু হয়েছিল। সেই সব ‘আত্মা’ নাকি ছিল চিকিৎসকের হাতে ‘খুন’ হওয়া রোগীদের।

‘প্রেতাত্মা’দের কার্যকলাপও নাকি ছিল খুব ভয়ঙ্কর। সেই জন্যই তড়িঘড়ি দ্বীপ ছে়ড়ে পালিয়ে যান মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কর্মীরা। রোগীদেরও অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

রোগীদের উপর মানসিক নির্যাতন চালানো ওই চিকিৎসকের শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল, তা অবশ্য পরে জানা যায়নি।

এখনও ওই হাসপাতালের ধ্বংসাবশেষ দ্বীপে রয়েছে। হাসপাতালে মানসিক রোগীদের থাকার প্রমাণও স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। কিন্তু ওই দ্বীপ এখন গাছগাছড়াতে ভরে গিয়েছে। পরিত্যক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাসপাতালের ভাঙাচোরা ভবন।

ভূতের দেখা মেলে বলে কানাঘুষো থাকায় এই দ্বীপে ‘ভূতশিকারি’দের অন্যতম প্রিয় জায়গা। ‘প্রেতচর্চা’ করেন এমন অনেক মানুষও নাকি ভিড় জমাতেন পরিত্যক্ত দ্বীপে। তবে বর্তমানে পোভেগ্লিয়া কেবল মাত্র দর্শকদেরই যেতে দেওয়া হয়।

ভেনিসের জাদুঘরে এখনও পোভেগ্লিয়ার ওই মানসিক হাসপাতালের অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র সংরক্ষণ করে রাখা রয়েছে।

সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দ্রুত পতনশীল অর্থনীতির কারণে ইতালির সরকার ২০১৪ সালে পোভেগ্লিয়া দ্বীপ একটি বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু জনরোষে পরে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল।

ছবি: সংগৃহীত।