আশরাফুজ্জামান বাবু, ঝিকরগাছা : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামে নিজ পিতার নাম জালিয়াতি করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবী করে মানুষের সাথে প্রতারণাকারী বিল্লাল হোসেনের নামে ঝিকরগাছা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
অভিযোগকারী হলেন পানিসারা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউ পি সদস্য আব্দুল আলিম। গত বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) লিখিত অভিযোগে আব্দুল আলিম উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের শেষের দিকে পানিসারা ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামের মৃত মোরশেদের ছেলে বিল্লাল হোসেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের নাম করে ৩ মাসের মধ্যে টিউবওয়েল দেবে বলে তিনটি টিউবওয়েল বাবদ ৭৫০০ টাকা গ্রহণ করে। কিন্তু বর্তমানে ১ বছর পার হয়ে গেলেও সে আমাকে টিউবওয়েল বা টাকা কোনোটাই দেয়নি। আজ কাল করে সে ঘোরাচ্ছে। এখন খোঁজ নিয়ে দেখি এরকম ২০০/২৫০ লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্হা গ্রহণ করার দাবী জানাচ্ছি।
অভিযোগ গ্রহণকারী তদন্ত কর্মকর্তা ঝিকরগাছা থানার এস আই (নিঃ) সুব্রত কুমার কুন্ডু বলেন, উল্লেখিত বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টির তদন্ত চলমান আছে।
শফিক মেজবাহ নামের এক প্রবাসী বলেন, বিল্লাল টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৩০০০ টাকা নিয়েছে। এখন টাকা ফেরত চাওয়ায় আমার নম্বর ব্লক মেরে রেখেছে।
এদিকে ঝিকরগাছা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারাকপুর গ্রামের ইদ্রিস আলি জানান, বিল্লালের পিতার মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে তঞ্চকতা আছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাজাহান আলী বলেন, যুদ্ধের ৫০ বছরে কোনোদিন শুনিনি কুলিয়া গ্রামের মোরশেদ মুক্তিযোদ্ধা ছিলো। এখন শুনছি বিল্লাল নিজের পিতাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে নিয়েছে।
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুল কাদির ইলিয়াস বলেন, কুলিয়া গ্রামের মোরশেদ নামে কোনো মুক্তিযোদ্ধার নাম আমি শুনিনি। কুলিয়া গ্রামে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই।
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন উপন্যাসিক, বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন, মোরশেদ বা মশিয়ার নামে কুলিয়ার কোনো মুক্তিযোদ্ধার নাম আমি শুনিনি বা ইতিহাসেও পাইনি। ওরা হয়তো অন্য কোনো মশিয়ারের ঠিকানা পরিবর্তন করে ঝিকরগাছা দেখিয়েছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কালীন ফিল্ড কমান্ডার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার বলেন, কুলিয়া গ্রামে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই। ঐ গ্রামে ১৫ জন রাজাকার ছিলো যার মধ্যে সিদ্দিক নামের এক রাজাকারকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল।
উল্লেখ্য গত কয়েকদিন বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হওয়ার পর কথিত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করা ডাক্তার বিল্লাল নিজের পিতার নাম আর তার মায়ের স্বামীর নাম পরিবর্তন করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করছে। ইতিমধ্যে সে স্থানীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছে তার পিতার নাম মশিয়ার এটা কোথাও লেখা নেই। সব জায়গায় ভুল করে মোরশেদ আলী লেখা আছে। অথচ ২০১৩ সালে সে তার পিতার নাম জালিয়াতি করে মোরশেদের স্থলে মশিয়ার রহমান লিখে যে এন আই ডি কার্ড সমাজ সেবা অধিদপ্তর এবং সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়েছিল তার কপি প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
এদিকে প্রতারণার স্বীকার ভুক্তভোগী এবং সচেতন নাগরিক মহল বিল্লালকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.