আশরাফুজ্জামান বাবু : পরিবারের সকলে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত, মা আমেনা বেগম নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামের মহিলা ইউনিটের নেতা, এখনো নিয়মিত গ্রামে মহিলাদের তালিম করান, ছোট ভাই জয়নাল হোসেন তীব্র আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী শিবির ক্যাডার। কুলিয়া বাজারে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি পাঠাগারের ঘর এই জয়নালের নেতৃত্বে ভেঙে দিয়েছিলো দুর্বৃত্তরা। জামায়াতে ইসলামকে ভালোবেসে সেই দলের নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া মুজাহিদের নামের সাথে মিল রেখে নিজের ছেলের নাম রেখেছেন মুজাহিদ, অথচ সেই বিল্লাল হোসেন এখন আওয়ামী লীগের বিরাট নেতা। ছিলেন তরুণ লীগের পানিসারা ইউনিয়নের সভাপতি। দুদিন আগে পর্যন্ত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ, ঝিকরগাছা উপজেলা শাখার সভাপতি।
গত দুইদিন তার প্রতারণার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, কে এই বিল্লাল? তার ক্ষমতার উৎস কি? কিভাবে তিনি অজপাড়াগাঁ থেকে ঝিকরগাছায় এত প্রভাবশালী হলেন?
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামের মৃত তারা চাঁদের সেজো ছেলে মোরশেদ আলীর ২য় স্ত্রীর ৪ ছেলেমেয়ের মধ্যে সবার বড় এই বিল্লাল। ১৯৮২ সালে জন্ম নেয়া বিল্লাল শিওরদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাশ করেন। অল্প বয়সে পিতা হারানোর ফলে বড় ছেলে হিসেবে সংসারের দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়লে ২০০৩ সালে জীবীকার সন্ধানে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান। সেখানে ৪ বছর কাটিয়ে দেশে ফিরে এসে গদখালি বাজারে আবু বক্কার সিদ্দিক এর ডিসপেনসারিতে সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। এখান থেকেই পল্লী চিকিৎসকের একটা প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের নামের আগে ডাক্তার লিখে শিওরদহ বাজারে আমেনা ফার্মেসী নামে একটা ঔষধের দোকান খোলেন। এই সার্টিফিকেট নিয়ে ডাক্তার লেখা নিষিদ্ধ থাকা স্বত্বেও তিনি এখনও নিজের নামের আগে ডাক্তার লিখে মানুষের সাথে প্রতারণা করে চলেছেন।
শিওরদহ পুলিশ ফাড়ি স্হাপিত হলে তিনি সেখানে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন এবং গ্রামের নিরিহ মানুষকে মামলার ভয় দেখিয়ে বা কারো নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করিয়ে অর্থ উপার্জন শুরু করে এই বিল্লাল। স্থানীয়রা তাকে ফাড়ির দালাল হিসেবেই জানে। কয়েক বছর আগে কুলিয়া গ্রামের আকরামের মেয়ে সাদিয়াকে দিয়ে তার আপন পিতার (আকরাম) বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ করান এই বিল্লাল। সাদিয়ার দাদী আকরামের মা কোহিনূর বেগম বলেন, বিল্লাহ আমার পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে। মিথ্যা মামলা চালাতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব ভিখারি হয়ে গেছি। আমি নিজে মাঠে কাজ করে মামলার খরচ চালিয়েছি। বিল্লালের কথায় আমার ছেলেকে ফাড়িতে ধরে নিয়ে গিয়ে পুলিশ বেধড়ক মারধর করে। পরে এই মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে কিন্তু আমরা আর মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারিনি। পরবর্তীতে ফাড়ির অফিসার ইনচার্জ বিল্লালের অপকর্ম ধরে ফেলে ফাড়িতে ঢোকা বন্ধ করে দেন।
বিল্লালের প্রতারণা থেকে বাদ যায়নি তার নিজের সৎ বোনও। তার পিতার ১ম পক্ষের একটি কন্যা সন্তান আছে। কিন্তু তাকে তার পিতার সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে এই বিল্লাল। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার একটি অংশ এবং পিতার জমির শরিকানা পাওয়ার আইন থাকলেও সেটা তিনি পাননি। এমনকি ঐ কন্যাকে তার বাবার বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছে এই বিল্লাল।
২০১৪ সালে টানা ২য় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সে স্হানীয় কিছু সুবিধাবাদী রাজনীতিকের হাত ধরে ২০১৬/১৭ সালে জামায়াতে ইসলাম থেকে আওয়ামী রাজনীতিতে নাম লেখান। বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে হাজির হয়ে নেতাদের সাথে ছবি তুলে সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করা শুরু করেন। কিছু নেতার আশীর্বাদে কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তরুন লীগের পানিসারা ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি হন। এই পরিচিতি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দেন-দরবার করে পরবর্তীতে ঝিকরগাছা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের সভাপতি পদ বাগিয়ে নেন।
কুলিয়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের সভাপতি হওয়ার পর তার অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন পল্লী চিকিৎসক বলেন, বিল্লালের কথা শুনলে মনে হতো সে নিজেই মুক্তিযুদ্ধ করেছে। কাউকে মানুষ বলে মনে করেনা। কিছু হলেই সে পুলিশ আর মামলার ভয় দেখিয়ে গ্রামের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে।
এদিকে বিল্লালের মুখোশ উন্মোচন হওয়ায় সারা এলাকায় খুশির বন্যা বইছে। সাধারণ জনগণ ফোন করে এই প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। সেই সাথে তার অপকর্মের শাস্তি নিশ্চিত করতে কতৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। (চলবে)
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.