গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : নিয়মবহির্ভূতভাবে ঋণ নেয়ার নামে ইসলামী ব্যাংকের অর্থ লুটপাটের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। অবিলম্বে জনগণের আমানতের টাকা ব্যাংকে ফেরত আনার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম এ বিবৃতি প্রদান করেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকিং জগতে অনন্য সাফল্যের অধিকারী ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ আজ এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের শিকার। বাংলাদেশের আপামর জনতার আমানত ও উদ্যোক্তাদের কঠোর পরিশ্রম, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের ফলে ইসলামী ব্যাংকিং জগতে সুদবিহীন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে বিগত প্রায় ৪০ বছর যাবৎ সাফল্যের সাথে কাজ করে আসছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, পল্লী অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও রেমিটেন্স প্রবাহের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক গতি সঞ্চার হয়।

ইসলামী ব্যাংকের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে এই ব্যাংককে অনুসরণ করে বাংলাদেশে আরো ১০টির মতো পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে এক হাজার শ্রেষ্ঠ ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশের একমাত্র ইসলামী ব্যাংকই এ স্বীকৃতির গর্বিত অংশীদার ছিল। ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও উদ্যোক্তাদের অভাবনীয় সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে ২০১৭ সালে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ পরিবর্তন করে ব্যাংকটি জবর দখল করে।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, এ সরকার ডেস্টিনি, হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, সোনালি ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারি, অর্থ আত্মসাৎ, বিদেশে অর্থ পাচার, লুটপাট ও শেয়ারবাজার ধসের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত করে। এরই ধারাবাহিকতায় কুচক্রী মহলের সর্বশেষ শিকার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ। রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রাম-বাংলা পর্যন্ত এই ব্যাংকের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। সরকারের লুটপাট, দুর্নীতি ও চক্রান্তের ফলে দেশের অর্থনীতিতে এক ভয়াবহ অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।

আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, ২০১৭ সালের পর থেকে পরিকল্পিতভাবে এই ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের প্রচেষ্টা চালানো হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে। কোম্পানি আইন ও বিধানের তোয়াক্কা না করে ঋণ প্রদানের সীমা লঙ্ঘন করে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও গ্রুপকে সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ দেয়ার নামে মূলত ইসলামী ব্যাংকের অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। নীরবে এই সব কর্মকাণ্ড অবাধে চলতে থাকা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সংবাদপত্রে অনিয়ম, জালিয়াতি ও লুটপাটের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর মায়াকান্না শুরু হয়েছে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের আমানত দ্বারা পরিচালিত দেশের সর্ববৃহৎ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ইসলামপন্থী ব্যক্তিবর্গ বিশ্বস্ততার সাথে জনগণের এই আমানত রক্ষা করেছে। লুটপাটের সুবিধার জন্য ব্যাংকটি জবর দখল করে অর্থ আত্মসাতের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকগণ তা কিছুতেই মেনে নিবে না।

আমরা অবিলম্বে লুটপাটকৃত অর্থ ফেরত আনার এবং নিয়মবহির্ভূত উপায়ে এই লুটপাট ও আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলামী ব্যাংক ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

প্রেস বিজ্ঞপ্তি