নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে ২৬টি শর্ত মেনে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশের ‘অনুমতির’ কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শর্তগুলোর মধ্যে এও রয়েছে যে, মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যেতে পারবেন না বিএনপি নেতাকর্মীরা।

তবে চিঠির প্রথম শর্তেই বলা হয়েছে, এটি স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়। স্থান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে বিএনপিকে। পুলিশের দেওয়া শর্তগুলো না মানলে তাৎক্ষণিকভাবে এই ‘অনুমতির আদেশ’ বাতিল হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার ডিএমপির পক্ষ থেকে বিএনপিকে দেওয়া এক চিঠিতে এসব শর্তের কথা জানানো হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বরাবর এই চিঠি পাঠিয়েছে ডিএমপি।

ডিএমপির উপকমিশনার আব্দুল মোমেন সাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ২০ নভেম্বর আপনার (এড. রুহুল কবির রিজভি) দাখিলকৃত আবেদনের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিপরীতে গণসমাবেশ করলে যানজট ও নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে। বিধায় উক্ত স্থানের পরিবর্তে ঢাকার সহ্রাওয়রাদি উদ্যানে শর্তাবলী পালন সাপেক্ষে ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিএনপির উদ্যোগে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করার অনুমতি প্রদান করা হলো।’

যে ২৬ শর্ত মানতে হবে:

১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমোদন নিতে হবে; ২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্ত যথাযথভাবে পালন করতে হবে; ৩. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে; ৪. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে; ৫. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি প্রবেশগেটে আর্চওয়ে স্থাপন করতে হবে এবং সমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে; ৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় Vehicle Scanner/ Search Mirror এর মাধ্যমে সমাবেশস্থলে আগত সব যানবাহন তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে; ৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনার সমাবেশস্থলে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে; ৯. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বা সড়কের পাশে মাইক/সাউন্ড ব্যবহার করা যাবে না; ১০. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।

১১. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমাবেত হওয়া যাবে না; ১২. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক/শব্দ যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না; ১৩. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে বাঙ্গচিত্র প্রদর্শণ বা বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না; ১৪. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে; ১৫. সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা পূর্বে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।

১৬. সমাবেশস্থলের আশপাশসহ রাস্তায় কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়াসহ যান ও জন চলাচলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না; ১৭. পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে কোনো ধরণের লাঠি-সোটা, রড ব্যবহার করা যাবে না; ১৮. আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না; ১৯. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না; ২০. উস্কানীমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।

২১. মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে আসা যাবে না; ২২. পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করতে হবে। মূল সড়কে কোনো গাড়ি পার্কিং করা যাবে না; ২৩. সমাবেশস্থলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে; ২৪. স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণপূর্বক সমাবেশ পরিচালনা করতে হবে; ২৫. উল্লেখিত শর্তাবলী যথার্থভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে এবং ২৬. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।