আশরাফুজ্জামান বাবু, ঝিকরগাছা প্রতিনিধি : জন্মের পর মা বাবা শখ করে নাম রেখেছিল আদুরী।
গরীবের ঘরের প্রথম কন্যা সন্তান। সংসারে অভাব থাকলেও দিনমজুর পিতা ইশা গাজী আর মাতা রহিমা বেগম মেয়ের আদরের কোনো রকম ঘাটতি রাখেনি। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের রিফুজি পাড়ায় জন্ম নেওয়া আদুরী আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। কিন্তু আর দশটা স্বাভাবিক শিশুর মত সে নয়। বড় হতেই বোঝা যায় তার বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা আছে।
ঈশা গাজী রহিমা দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যা সন্তান আদুরী (২৪)। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তাই স্কুলে পড়া হয়নি। ২০১৯ সালে আদুরীর বয়স তখন ২১ বছর। অভাবের সংসার। তার বাবা মাঠে দিনমজুরী করে, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে, ভাইয়েরাও পেটের তাগিদে বাড়িতে থাকেনা। দিনের বেলা আদুরী একাই বাড়িতে থাকে। আর এই সুযোগে তাদের সামনের বাড়ির ওসমানের ছেলে সাইফুল (২৬) বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আদুরীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এভাবে কয়েক মাস যাবৎ আদুরীকে ভোগ করে সাইফুল। একসময় অন্তঃসত্ত্বা হয় আদুরী। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আদুরী এটা না বুঝতে পারলেও তার শারীরিক পরিবর্তন মায়ের চোখে ধরা পড়ে। অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্হানীয় কাশিপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে নিলে ডাক্তাররা পরীক্ষা নীরিক্ষা করে জানায় আদুরী ৩ মাসের গর্ভবতী। মায়ের জিজ্ঞাসাবাদে সে বলে সাইফুল এই কাজের জন্য দায়ী। তখন আদুরীর পরিবার সাইফুলের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে সাইফুল আদুরীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। সাইফুলের পিতা ওসমান ধনী ব্যক্তি হওয়ায় গরীব অসহায় আদুরীর পরিবার তাদের ওপর কোনো রকম চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি।
অনন্যপায় হয়ে ২০১৯ সালের ১৬ জুন আদুরীর পিতা ঈশা গাজী বাদী হয়ে সাইফুলকে আসামি করে ঝিকরগাছা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার নং জি আর নাঃ/শিশু ৯৪/১৯। মামলা হওয়ার পর পুলিশ সাইফুলকে আটক করে এবং ৬ মাস জেল খাটার পর জামিনে মুক্ত হয়ে অন্য আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করে। কয়েকমাস পর আদুরী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়।তার নাম রাখা হয় আশরাফুল। তখন থেকেই সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবীতে আদুরীর পরিবার আদালত আর সমাজপতি দের দ্বারেদ্বারে ঘুরছেন।
আদুরীর মাতা রহিমা বেগম বলেন, মেয়েটাকে পাগল পেয়ে ওসমানের ছেলে সাইফুল তাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে সে গর্ভবতী হলে আমরা সাইফুলকে বিয়ের কথা বলি। কিন্তু তারা বড়লোক হওয়ায় আমাদের মেয়েকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এখন মেয়ে তার সন্তানকে নিয়ে আমরা চরম হতাশার মধ্যে বাস করছি। এই ছেলের ভবিষ্যৎ কি হবে? গ্রামের মাতব্বররা দুইবার শালিস করেছে। সর্বশেষ দুইলাখ টাকা দিয়ে মিটিয়ে নিতে চেয়েছে। কিন্তু আমরা টাকা চাইনা, মেয়ের সন্তানের পিতৃ পরিচয় চাই।
তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, কোর্টও আমাদের কথা শোনেনা। আজ প্রায় ৪ বছর মামলা করেছি কিন্তু কোর্ট থেকে আমাদের মাত্র একবারই ডেকেছিলো, আর কোনোদিন ডাকেনি। শুনছি সাইফুলরা নাকি উকিলদের টাকা পয়সা দিয়ে সব ঠিক করে নিয়েছে। এখন ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়েও আমরা শংকায় আছি।
প্রতিবেশী সপ্না পারভিন, আলেয়া বেগম, ফারুক হোসেন, আঃ জব্বারসহ আরও কয়েকজন জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাইফুল প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। ফলে মেয়েটি অন্তঃস্বত্তা হয় এবং একটি ছেলে জন্ম দেয়। ছেলেটির চেহারা এবং সাইফুলের চেহারা অবিকল একইরকম। কিন্তু তারা প্রভাবশালী হওয়ায় মেয়েটিকে বিয়ে করলোনা। আমরা এর বিচার চাই।
অভিযুক্ত সাইফুলের পিতা ওসমান জানান, তারা আমার ছেলের নামে কোর্টে মামলা করেছে। আমরা এই ঘটনা টাকা পয়সা দিয়ে মেটাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা মেটায়নি। এখন কোর্টে যা হবে আমরা সেটা মেনে নেবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফিজুুর রহমান বলেন, ঘটনা সম্পর্কে আমি সব জানি। কিন্তু এধরনের কেস মেটানোর এখতিয়ার আমাদের নেই। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তাই এই বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাইনা।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল মুননাফ, মোবাইল : ০১৭১১ ৩৫৯৬৩১, ইমেইল: gsongbad440@gmail.com, IT Support: Trust Soft BD
Copyright © 2024 gramer songbad. All rights reserved.