নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। কয়েকটি জেলায় অতি তীব্রতাপপ্রবাহও শুরু হয়েছে। দেশজুড়ে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের তীব্র হাঁসফাঁস অবস্থা। আবহাওয়া অধিদপ্তরও কোনো সুসংবাদ দিতে পারছে না।

এ অবস্থায় গরম থেকে মুক্তি পেতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির প্রার্থনা করে বিশেষ নামাজ পড়ছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। বৃহস্পতিবার জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমানের ইমামতিতে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা।

দাবদাহের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির নামাজ পড়ে প্রার্থনা করছেন সাধারণ মানুষ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে সেসব খবর।

প্রচণ্ড গরমে বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। বাংলাদেশের তাপপ্রবাহের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো এলাকার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। এতে শিশুসহ সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। স্কুল–কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃষ্টির জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের দাবদাহ নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি ‘প্রচণ্ড তাপে ৩ কোটি ৩০ লাখ শিশুর স্কুল বন্ধ’ শিরোনামে প্রতিবেদন করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। স্কুল–কলেজগুলো ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিলিপাইন ও ভারতও।

বিবিসি বলছে, জলবায়ু সংকটের কারণে বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার বাড়লে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর ৩ কোটি ৫০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দাবদাহ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। ‘অস্বস্তি বাড়তে পারে: এশিয়ার তাপপ্রবাহে পুড়ছে কোটি কোটি মানুষ’ শিরোনামে প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম বলেছে, এপ্রিল মাসে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আবহাওয়া সাধারণত গরম থাকে। তবে এ বছর তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।

দাবদাহের ভয়াবহতা তুলে ধরতে নিউইয়র্ক টাইমসে এক রিকশাচালকের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। নূরে আলম নামের ওই ব্যক্তি ঢাকার মগবাজার এলাকায় রিকশা চালান। আগে তিনি ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা রিকশা চালাতেন। গরমের কারণে এখন পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা চালান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সোমবার নূরে আলমের আশা ছিল, ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করতে পারবেন। আগে প্রতিদিন এর দ্বিগুণ আয় হতো। নূরে আলম বলেন, ‘আগে কখনো এত গরম দেখিনি। প্রতিবছরই গরম বাড়ে। তবে এ বছর চরম আকার ধারণ করেছে।’

গরমের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের বৃষ্টির জন্য প্রার্থনার খবর তুলে ধরা হয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে। এএফপি বলছে, গরম থেকে মুক্তি পেতে শহরের মসজিদ ও গ্রামের মাঠে প্রার্থনা করেছেন মুসলমানরা।

বৃহস্পতিবার বাইতুলে মোকারমে বৃষ্টির নামাজ পড়া হয়
মুহাম্মদ আবু ইউসুফ নামে ঢাকার একজন ইমাম বলেন, ‘বৃষ্টির অভাবে জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। গরিব মানুষেরা খুব দুর্দশার মধ্যে রয়েছে।’ এএফপির এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশে স্কুল বন্ধের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বাংলাদেশে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গরম থেকে রক্ষায় বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এছাড়াও স্কুল বন্ধের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সংস্থা—ওসিএইচএ পরিচালিত ওয়েবসাইট রিলিফওয়েব।