মোঃ সাইদুল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধিঃ-২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বেনাপোল পিকনিকের গাড়ি দূর্ঘটনার নয় শিশুর মৃত্যর শোকাবহ দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষে দিনব্যাপি অনুষ্ঠান কর্মসুচি অংশগ্রহন করেন বেনাপোল পৌর মেয়র আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন।

উক্ত অনুষ্ঠানে নিহতদের অভিভাবক, ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, নিহতদের সহপাঠি শিক্ষার্থীগন, বেনাপোলের অন্যান্য স্কুল-মাদ্রাসা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ, শিক্ষানুরাগী, সাংবাদিক, পৌর কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দসহ বন্দর এলাকার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে উপস্থিত হতে থাকেন। সকলের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ওই বিশাল শোক রেয়ালি সকাল ১১টার দিকে স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে বেনাপোল বাজার প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় স্কুলের সম্মুখে এসে শেষ হয়।

এর আগে সকালে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্মৃতিস্তম্ভে পুস্প অর্পন শেষে বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইজ্জত আলীর সভাপতিত্বে প্রাধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন,বেনাপোল পৌর মেয়র আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন, শার্শা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য অহিদুজ্জামান অহিদ, পৌর প্যানেল মেয়র মোছাঃ কামরুন নাহার আন্না, প্যানেল মেয়র মোঃ শরিফুল ইসলাম শরিফ,বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমতির সাধারন সম্পাদক ও বেনাপোল পৌর কাউন্সিলর মোঃ আজিম উদ্দিন গাজী, পৌর কাউন্সিলর কাজী শাহিনুল ইসলাম শাহিন, বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ এনামুল হক মুকুল, বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, বেনাপোল পৌরবাসীর আহবায়ক মোস্তাক হোসেন স্বপ্ন, বন্দর শ্রমিক নেতা রাজু আহাম্মেদ, পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টু, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সহ নিহত শিশুদের স্বজনেরা।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বেনাপোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে মেহেরপুরের মুজিবনগরে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে চৌগাছার ঝাউতলা কাঁদবিলা পুকুর পাড়ে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৭জন শিক্ষার্থী, আহত হয় আরো ৭০ জন শিশু শিক্ষার্থী ও ৩/৪ জন শিক্ষক। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ২ জন শিক্ষার্থী মারা যান।

ঘটনাস্থলে নিহতরা হলো, বেনাপোল পৌরসভার ছোটআঁচড়া গ্রামের সৈয়দ আলীর দুই মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া (১০) ও তার বোন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী জেবা আক্তার (৮), ছোটআঁচড়া গ্রামের ইউনুস আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মিথিলা (১০), রফিকুল ইসলামের মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী রুনা আক্তার মীম (৯), লোকমান হোসেনের ছেলে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শান্ত (৯), গাজিপুর গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সাব্বির হোসেন (১০) ও নামাজ গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী আঁখি (১১)। ১৩ দিন পর ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ছোটআঁচড়া গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ইকরামুল (১১) সর্বশেষ দুর্ঘটনার ৩২ দিন পর ১৯ মার্চ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ছোটআঁচড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইয়ানুর রহমান (১১)।

দিন মাস পার হয়ে ফিরে এসেছে নয় বছর পর ঠিক এই দিনটি। কিন্তু ফিরে আসিনি হারিয়ে যাওয়া ৯ শিশু শিক্ষার্থী। আজো কাঁন্না থামেনি হারিয়ে যাওয়া এ সব শিশুদের পরিবারের। পথ চেয়ে বসে আছে এই বুঝি ফিরে আসছে তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানেরা। ঝরে যাওয়া ফুল ফিরে পাবে না পরিবারের সদস্যরা। তাদেরকে অশ্রুতে স্মরণ করলো নয় বছর পর আবারও বেনাপোলবাসি।