অন্যান্য | তারিখঃ জানুয়ারি ২৮, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1507 বার
ডেস্ক রিপোর্ট : ভারতীয় উপমহাদেশে মোগল সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তনের পর জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১১ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন। পরবর্তীতে ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেন। এরপর কয়েকটি অভিযানে সফলতা লাভের পর ১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে সুলতান ইবরাহিম লোদিকে পরাজিত করে দিল্লি সালতানাতের স্থানে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।
মোগল সাম্রাজ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রাথমিক আধুনিক সাম্রাজ্য। প্রায় দুই শতাব্দী ধরে পশ্চিমে সিন্ধু নদী, উত্তর-পশ্চিমে উত্তর আফগানিস্তান এবং উত্তরে কাশ্মীর, পূর্বে আসাম ও বাংলাদেশ, দক্ষিণে ভারতের দাক্ষিণাত্যের মালভূমি।
মোগল শাসকদের আমলে ভারতবর্ষে অনেকগুলো শিল্প ও স্থাপত্য গড়ে উঠে। এসকল স্থাপত্যে গম্বুজের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সম্রাট বাবর তার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর ১৫২৭ সালে অযোধ্যার এই এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তারই সেনাপতি মীর বাকি। এর পরের বছর, অর্থাৎ ১৫২৮ সালে সম্রাট বাবরের নামানুসারে সরযূ নদীর পাড়ে নির্মাণ করা হয় ৩ গম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ। সাড়ে ৪ শতক পরে যেটি ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
মোগল সেনাপতি মীর বাকির বাবরি মসজিদ নির্মাণের অন্তত ৩৫৭ বছর পরে ১৮৮৫ সালে মসজিদটি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক এবং আইনি লড়াই। এই মসজিদটিকে শ্রীরামচন্দ্রের জন্মস্থান ভেঙে তৈরি করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করতেন হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ। তারা বলতেন, মসজিদের ভেতরে থাকা একটি উঁচু বেদীর মতো অংশে শ্রীরামচন্দ্র ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। হিন্দুত্ববাদীদের আরো দাবি, মোগল আমলে একাধিকবার এই জমি উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও সে দাবির পক্ষে জোরালো ঐতিহাসিক কোন তথ্য বা প্রমাণ পাওয়া দেখাতে পারেনি তারা।
তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে মহন্ত রঘবীর দাস নামের এক হিন্দুর দায়ের করা মামলায় সেনাপতি মীর বাকি নির্মিত বাবরি মসজিদ নিয়ে পুনরায় বিতর্ক শুরু হয়। তৎকালীন ব্রিটিশ আদালত মহন্ত রঘবীর দাসের দায়ের করা মামলাটি খারিজ করে দেয়।
১৯৪৯ সালের ২২ডিসেম্বর রাতে কে বা কারা বাবরি মসজিদের ভেতরে রাম ও সীতার মূর্তি রেখে আসে। এসময় ঐ ঘটনাকে অলৌকিক বলে দাবি করে প্রার্থনা করতে শুরু করে মন্দিরে পক্ষে অবস্থানকারীরা। এ ঘটনার পর বিবাদ এড়াতে ১৯৫০ সালে মসজিদটিতে তালা লাগিয়ে দেয় ভারতীয় আদালত। সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় হিন্দুদের মূর্তি দর্শনও।
১৯৫৯ সালে হিন্দুদের পক্ষে জমি ফেরত চেয়ে পুনরায় মামলা করেন নির্মোহী আখড়া নামের একজন। অপরদিকে ১৯৬১ সালে মসজিদের জমির মালিকানা দাবি করে মুসলমানদের পক্ষে আদালতের দ্বারস্থ হয় উত্তর প্রদেশ মুসলিম ওয়াকফ বোর্ড। ১৯৮০ সালের দিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও তাদের রাজনৈতিক সহযোগী কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ওই স্থানে রাম মন্দির নির্মাণে প্রচারাভিযান শুরু করে।
১৯৮৬ সালে আদালত মসজিদের তালা খোলার নির্দেশ দেয়। ১৯৯০ সালে এ প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে বেশ কিছু শোভাযাত্রা ও মিছিল বের করেন লাল কৃষ্ণ আদভানি। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি দেড় লাখ কর সেবক নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করে। এ শোভাযাত্রা চলাকালীন সময়ে উগ্রবাদী হিন্দুরা সহিংস হয়ে ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত এ মসজিদটিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলে। যা মুসলমানদের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে।
পরবর্তীকালের অনুসন্ধানে এই মসজিদ ভাঙার অপরাধে ৬৮ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, যাদের অধিকাংশই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বিজেপির নেতা বলে জানা গেছে। ৩ এপ্রিল ১৯৯৩ সালে সংসদে পাশ হওয়া এক আইনের মাধ্যমে এ জমি দখল করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া ও রামলালা, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে এই তিনভাগে জমিটি ভাগ করার রায় দেয় এলাহাবাদের তিন বিচারকের বেঞ্চ। কিন্তু ২০১১ সালের ৯ মে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় এবং ৯ নভেম্বর শনিবার ২০১৯ অযোধ্যার এ জমিটিতে হিন্দুদের মন্দির নির্মাণের রায় দেয় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট।
একইসঙ্গে মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিমদের বিকল্প ৫ একর জমি দেওয়ার রায় দেয়া হয়। তবে রাম মন্দির উদ্বোধনের কাজ শুরু হলেও সেই মসজিদ নির্মাণের কাজ এখনো শুরু হয়নি।