গাজীপুর, জেলার খবর, ঢাকা বিভাগ | তারিখঃ আগস্ট ৪, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 6958 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের শ্রীপুরে জেল থেকে বেড়িয়ে বাড়ি গিয়ে স্বামীর নতুন স্ত্রীর তারাখেয়ে দুই সন্তান নিয়ে বিচারের দাবিতে খোলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়ানো ওই নারী উপায়ান্তর না পেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) বিকেলে শ্রীপুর থানা চত্বরে লিখিত সংবাদ সম্মেলনে এক লিখিত বক্তব্যে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে এবং সন্তান নিয়ে নিজগৃহে ফিরে যাওযার আকুতি জানান।সাজানো মামলায় এক বছরের কন্যা সন্তান নিয়ে দুই মাস জেলে থাকার পর নাছরিন জেল থেকে বেড়িয়ে বাড়ি ফিরে দেখে ঘরে স্বামীর সদ্য বিয়ে করা নতুন স্ত্রী। নিজ ঘর থেকে সন্তানসহ নাছরিনকে পিটিয়ে বের করে দেয় তার স্বামী ও স্বামীর নতুন স্ত্রী।
গত ২০ জুলাই জেল থেকে বের হয়ে প্রায় ১৫দিন যাবৎ দুই শিশুসন্তান নিয়ে কখনো মানুষের বারান্দায়,কখনো খোলা আকাশের নীচে চরম নিরাপত্তাহীনতায় মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে নাছরিন।
ভুক্তভোগ নারী নাছরিন দুই শিশু সন্তানসহ নিজ গৃহে ফেরার দাবিতে স্হানীয় কাউন্সিল,প্রশাসনসহ বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোন উপায়ান্তর না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন। লিখিত বক্তব্যে নাসরিন জানান,তার পৈতৃক বাড়ি বাগেরহাট জেলা সদরের অর্জুন বহর গ্রামে। ২০১৩ সাল চাকুরীর সুবাধে শ্রীপুর পৌর এলাকার বহেরারচালা গ্রামে বসবাস শুরু করে সে। তার মায়ের পৈত্রিক জমি বিক্রির টাকা দিয়ে বহেরার চালা এলাকার জনৈক বিল্লাল ও মজিবর রহমানের নিকট হইতে সরকারী খাস জমি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে খরিদ করিয়া বসতবাড়ী নির্মান করে। পরে চাকুরী ছেড়ে জনৈক তোফাজ্জল হোসেনের মালিকানাধীন দুইটি দোকান ঘর সাড়ে ৭ লাখ টাকা জামানত দিয়ে ভাড়া নিয়ে ২০১৬ সালে টেইলারিং এর ব্যবসা শুরু করি।
২০১৮ সালে দোকানঘর মালিক তোফাজ্জল অভিভাবক সেজে তার সহযোগী একই উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের পেলাইদ গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে কবির হোসেনের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় নাসরিনকে।নাছরিন বলেন,ওই তোফাজ্জল ও তার স্বামী কবির সুপরিকল্পিত ভাবে আমার দোকান ও বসতবাড়ী আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে বিবাহের পর থেকেই নানান ভাবে পরস্পর যোগসাজসে আমার দোকান হইতে নানা অযুহাতে টাকা পয়সা নিয়ে আত্মসাত করে। আমার স্বামী কৌশলে বিভিন্ন এনজিও হইতে আমার নামে প্রায় ১০ লাখ টাকার অধিক ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাত করে। একপর্যায়ে তারা ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে আমার ব্যবসায়ীক দোকান হাতিয়ে নেয় এবং আমার বসতবাড়ী লিখে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। আমি তাদের প্রতারনার বিষয়টি বুঝতে পেরে আমার বসতবাড়ীটি রক্ষার জন্য আমার ভাইয়ের নামে লিখে দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। তারা জোর পূর্বক আমার কাছ থেকে ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে আমার বাড়িটি তোফাজ্জলের ভাই আজিজুল দারোগার স্ত্রী মোসা: রেখার নামে লিখে নেয়। প্রতিবাদ করায় আমাকে দোকানে অবরোদ্ধ করে আমার নিকট হইতে কিছু ষ্ট্যাম্প ও চেকে একাধিক স্বাক্ষর নেয়। পরে তোফাজ্জলের স্ত্রীকে বাদি বানিয়ে চেক ও স্ট্যাম্প দিয়া আদালতে মামলা দায়ের করে আমাকে তিন বার জেলহাজত খাটায়। সর্ব শেষ তাদের সাজানো মামলা আমি বিগত ৫ মে থেকে প্রায় ২ মাস জেল হাজতে থাকার পর ২০ জুলাই সাজা খেটে বাড়ীতে এসে দেখি আমার স্বামী কবির পুনরায় বিয়ে করে নতুন স্ত্রীকে ঘরে তুলে রেখেছে। এ বিষয়ে আমার স্বামীর নিকট জানতে চাইলে আমার স্বামী ও তাহার নতুন স্ত্রী আমাকে হুমকি দিয়া বাড়ী হইতে তাড়িয়ে দেয়। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও কাউন্সিলের স্বরাপন্ন হয়ে কোন প্রকার বিচার না পেয়ে ৩১জুলাই শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে নাছরিন। অভিযোগ দায়েরের কথা স্বামী জানতে পেরে নাছরিনকে ডেকে নিয়ে তার শ্বাশুরী,স্বামী এবং স্বামীর নতুন স্ত্রী মারধর করে নাসরিনকে।
নাছরিন জানান, অভিযোগ তুলে না নিলে আমাকে ও নাবালক দুই শিশু সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়েছে তার পাষন্ডস্বামী। এছাড়াও জোরপূর্বক লিখে নেয়া বাড়ি ও তোফাজ্জলের নিকট হইতে ভাড়া নেওয়া দোকানের জামানতের টাকা না পেয়ে বিনা শর্তে আপোষ মিমাংসা না করলে কোনদিন তাকে বাড়িতে উটতে দিবে না বলে জানিয়েছে তার স্বামী কবির। দুই সন্তানসহ নাছরিন খোলা আকাশের নীচে ঘুরে বেড়ানো নাছরিনকে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো, তরিকুল ইসলাম ব্যক্তিগতভাবে তিন হাজার টাকা প্রদান করেন এবং লিখিত আবেদন করলে আইনী সহায়তার আশ্বাস দেন।