আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শখের জন্য অনেকেই বাড়িতে নানা রকম পাখি পোষেন। তবে একটা প্রবাদ সকলেরই জানা, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’! নেহাতই শখের বশে খাঁচায় বন্দি করে রাখার বিষয়টি আবার অনেকেরই অপছন্দ।

শখ করে পাখি পোষাই হোক, বা পাখি ধরে পোষ মানানো, এই দু’টি বিষয় বেশির ভাগ পাখির ক্ষেত্রে সহজ হলেও, দুই প্রজাতির পাখির ক্ষেত্রে অতটা সহজ নয়।

এই দুই প্রজাতির পাখির সংস্পর্শে এলে বা কোনও রকমে ছুঁয়ে ফেললে তার ফল মারাত্মক হতে পারে। শুধু তাই-ই নয়, মৃত্যুও হতে পারে। পাখিকে ছুঁলেই মৃত্যু? এমন আগে কখনও শুনেছেন? বিশ্বাস না-ও হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এমনই পাখি আছে, যেগুলি প্রাণঘাতী।

বিষাক্ত সাপ, পোকামাকড়, সরীসৃপ সম্পর্কে আমরা অনেক কথাই শুনেছি। কিন্তু বিষাক্ত পাখি? বোধহয় এমন কাহিনি আগে কেউ কখনও শোনেননি। জানতে পারার কথাও নয়। কারণ, সম্প্রতি এমনই দুই প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

ডেনমার্কের বিজ্ঞানীরা যে দুই প্রজাতির পাখির সন্ধান পেয়েছেন, তাঁদের দাবি, এই পাখিগুলি আর পাঁচটি সাধারণ পাখির মতো নয় যে, এদের মন চাইলে খাওয়াবেন বা গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করবেন। ফলে এই সব পাখি থেকে দূরে থাকতেই পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

তবে আনন্দের বিষয় যে, এই দুই প্রজাতির পাখি ভারত-বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি । ডেনমার্কের বিজ্ঞানীরা এই দুই ঘাতক পাখির সন্ধান পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তরের দ্বীপ নিউ গিনিতে।

কেন এই দুই প্রজাতির পাখি প্রাণঘাতী? তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ড্যানিশ বিজ্ঞানীরা। নিউ গিনির গভীর অরণ্যে রুফাস-নেপ্‌ড বেলবার্ড (অ্যালিয়াড্রায়স রুফিনুসা) এবং রিজেন্ট হুইস্‌লার (প্যাশিসেফালা স্কেলেগেলি)— এই দুই প্রজাতির পাখির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।

বিজ্ঞানীদের দাবি, জঙ্গলের বিষাক্ত ফল, খাবার খেয়ে নিজেদের মধ্যে একটা প্রতিরেোধ ক্ষমতা গড়ে তুলেছে এই পাখিরা। সেই বিষের ক্ষমতা সহ্য করাই নয়, নিজেদের মতো করে শরীরে বিষ সঞ্চয় করে এই পাখিরা। আর সেই বিষ পালকে এবং ডানাতেও সঞ্চিত থাকে।

ডেনমার্কের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজ়িয়াম-এর বিজ্ঞানী নুড ইয়েনসন বলেন, “আমরা দু’টি প্রজাতির বিষাক্ত পাখির সন্ধান পেয়েছি। এই পাখিগুলি শরীরে নিউরোটক্সিন সৃষ্টি করে। আর সেই ঘাতক বিষ সঞ্চয় করে পালকে।”

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকায় যে বিষাক্ত ব্যাং পাওয়া যায়, সেই ব্যাঙের শরীরে যে ধরনের বিষ থাকে, বেলবার্ড এবং রিজেন্ট হুইস্‌লারের দেহেও একই ধরনের বিষের উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে।

দক্ষিণ আমেরিকার সেই বিষাক্ত ব্যাং ‘ডার্ট ফ্রগ’ নামে পরিচিত। ক্ষুদ্রাকৃতির সেই ব্যাঙের বিষ এক জন মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে। এই দুই প্রজাতির পাখির ক্ষেত্রেও তাই। একটু ছুঁলেই মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই প্রজাতির পাখিদের শরীরে বাত্রাকোটক্সিন নামে অত্যন্ত ঘাতক নিউরোটক্সিন বিষ পাওয়া গিয়েছে। এই বিষ শরীরের সংস্পর্শে এলে ভয়ানক খিঁচুনি শুরু হয়, এমনকি হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যুও হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করছেন, কী ভাবে এই দুই প্রজাতির পাখি ভয়ানক বিষ সহ্য করছে। কী ভাবেই বা নিজেদের খাপ খাইয়ে তুলল এই বিষের সঙ্গে।

তবে প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যে অঞ্চলে এই দুই ধরনের পাখির দেখা মিলেছে, সেখানে সোডিয়ামের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। আর সেই সোডিয়ামই পাখিগুলির মধ্যে বিষ প্রতিরোধকারী ক্ষমতা বাড়িয়েছে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শুধু কি নিউ গিনিতেই এই পাখি রয়েছে, না কি অন্য কোথাও এই বিষাক্ত পাখি রয়েছে, তার খোঁজও চলছে। পাশাপাশি তাঁরা আরও জানিয়েছেন যে, এই দুই প্রজাতির পাখির সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য অজানা রয়েছে, সেগুলি নিয়েও গবেষণা করা হচ্ছে।

সুত্র– সংগ্রীহিত।