সারাবিশ্ব | তারিখঃ জানুয়ারি ২০, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3465 বার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রায় ১ বছর হতে চলল ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চালাচ্ছে রাশিয়া। গত ১১ মাসের যুদ্ধে ধ্বংসের নানা বিভীষিকার ছবি দেখেছে দুনিয়া। কিন্তু যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষ্মণই নেই। বরং আগামী দিনে রণাঙ্গনে আরও পরাক্রমশালী হতে বিপজ্জনক অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী।
প্রকৃতির রোষে সুনামির মতো বিপদ ঘটে। অতীতে সুনামির ভয়াবহতার সাক্ষী থেকেছে গোটা বিশ্ব। এ বার পুতিনের খামখেয়ালিপনায় সুনামি ঘটতে পারে। ভাবছেন, এ আবার কী ভাবে সম্ভব!
এই অসম্ভবকেই সম্ভব করে ফেলেছে পুতিনের দেশ। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যেই এমন একটি ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ বানিয়ে ফেলেছে মস্কো, যা কিনা সুনামির মতো জলোচ্ছ্বাস তৈরি করতে পারে।
পরমাণু শক্তিচালিত একটি বিশেষ ধরনের টর্পেডো বানিয়ে ফেলেছে রাশিয়া। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পোসেইডন’। পরমাণু চালিত ডুবোজাহাজ থেকে এই টর্পোডোটি নিক্ষেপ করা হবে। সেই ডুবোজাহাজের কাজও শেষ পর্যায়ে।
২০১৮ সালে এই অস্ত্রের কথা প্রথম প্রকাশ্যে এনেছিলেন পুতিন। তার পর থেকেই রাশিয়ার এই অত্যাধুনিক ও বিপজ্জনক অস্ত্র নিয়ে চর্চা চলেছে। সম্প্রতি ওই অস্ত্র তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। রুশ সংবাদ সংস্থা ‘তাস’ সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে ‘পোসেইডন’ নামে পরমাণু শক্তিচালিত এই বিশেষ টর্পেডো তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। শীঘ্রই তা নৌসেনা ঘাঁটি বেলগ্রেডে পাঠানো হবে।
গ্রিক পুরাণে সমুদ্রের দেবতার নাম পোসেইডন। তাঁর নামে এই অস্ত্রটিকে নামাঙ্কিত করা হয়েছে। তবে এটি শুধুই টর্পোডো নয়। ড্রোন ও টর্পেডোর সম্মিলিত রূপ হল এই অস্ত্র।
পরমাণু শক্তিচালিত স্বয়ংক্রিয় ক্ষেপণাস্ত্র এটি। যা ডুবোজাহাজ থেকে নিক্ষেপ করার পর বহু দূর পর্যন্ত গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
এই টর্পেডোটি লম্বায় ২০ মিটার। তাতে রয়েছে ১৫ মেগাওয়াটের পরমাণু চালিত ইঞ্জিন। ১ হাজার মিটার গভীরে যেতে সক্ষম এই অস্ত্র। পাশাপাশি কমপক্ষে ১ হাজার কিমি দূরত্ব পর্যন্ত পাড়ি দিতে পারে এটি।
পুতিনের এই অস্ত্রকে ধ্বংস করতে পারবে, এমন কোনও অস্ত্রই নাকি এই দুনিয়ায় নেই। অর্থাৎ, এটি অবিনশ্বর বলে দাবি করা হয়েছে। নিঃশব্দে শত্রুর উপর আঘাত হানতে পারে এই অস্ত্র।
সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ওই টর্পেডোটি নিক্ষেপ করলে সুনামির মতো ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস তৈরি হতে পারে। এই অস্ত্র এতটাই শক্তিশালী যে, আমেরিকার উপকূলবর্তী শহরগুলি তছনছ করে দিতে পারে।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই অস্ত্রটি ঘণ্টায় ২০০ কিমি বেগে ছুটতে পারে। এই অস্ত্রের মডেল নিয়ে ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলক মহড়া সেরেছেন ডুবোজাহাজের ক্রু সদস্যরা।
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে রাশিয়ার। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে পশ্চিমি দেশগুলি। যা মোটেই ভাল চোখে দেখছে না মস্কো। এই আবহে পুতিনের এই অস্ত্রের তোড়জোড়ের খবর আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম ইউক্রেনের মাটিতে আক্রমণ চালায় রুশ বাহিনী। যত দিন গড়িয়েছে, দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। রুশ বাহিনীর আক্রমণে ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। ইউক্রেনের বহু মানুষই ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে পুতিনের হাতে এই ‘অবিনশ্বর’ অস্ত্র ঘিরে কৌতূহল তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। রাশিয়ার এই অস্ত্র কতটা বিপজ্জনক হবে সে নিয়ে চর্চা চলছে। ইউক্রেনকে যুদ্ধে পরাস্ত করে নানা অস্ত্রের সম্ভার নিয়ে পুরোদমে ঝাঁপিয়ে পড়ছে পুতিনের সৈন্যদল। সেই তালিকায় এই শক্তিশালী অস্ত্র ইউক্রেনের পাশাপাশি মাথাব্যথা বাড়িয়েছে পশ্চিমি দেশগুলিরও।
সুত্র — আনন্দবাজার পত্রিকা।