রাজনীতি | তারিখঃ জানুয়ারি ১০, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 41157 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ বিএনপি রাজধানীসহ সারাদেশে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। গণমিছিলের মতো এই কর্মসূচিও জোরালোভাবে করতে চায় দলটি। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে কর্মসূচিতে অংশ নেবে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে গঠিত সমমনা জোটগুলোও এতে অংশ নেবে। কর্মসূচিতে বড় জমায়েত নিশ্চিত করতে দলগুলোর পক্ষ থেকে নানা প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। বিএনপির এই গণঅবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা আসবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে সারাদেশে বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সারাদেশে সর্তক পাহারায় থাকবে দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে প্রতিরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ একাধিক নেতা।
আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা করলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ, সুসংগঠিত। আওয়ামী লীগ এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র, আন্দোলনের নামে যে কোনো সহিংসতার সমুচিত জবাব ও সাম্প্রদায়িকতার উত্থান রুখে দিতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ।’
এদিকে বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জনদুর্ভোগ ও নৈরাজ্য বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে মুজিব কর্নার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করলে বিএনপি কোনো বাধার মুখে পড়বে না। তাদের কর্মসূচি জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ালে তা বরদাশত করা হবে না।’
সরকার বিএনপির কর্মসূচিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। দলটি তাদের আগের কর্মসূচিতে সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাস্তা অবরোধ করে গণঅবস্থানের নামে ভাঙচুর ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের প্রতিহত করবে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে সারাদেশে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের একপাশের সড়কে আজ চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি করবে বিএনপি। গতকাল রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন পুলিশের অনুমতি পাওয়ার কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নয়া পল্টনে আমাদের কেন্দ্রৗয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। পুলিশের অনুমতিও আমরা পেয়েছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচি করব।’
এর আগে দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে নিয়ে ডিএমপি কার্যালয়ে যান তিনি। তারা কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আজ ঢাকাসহ ১০টি বিভাগীয় (সাংগঠনিক বিভাগসহ) সদরে এই গণঅবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটও আলাদাভাবে এই কর্মসূচি একযোগে পালন করবে। ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছে সংশ্লিষ্ট দল ও জোট নেতারা।
গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা আসবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির শীর্ষনেতারা। ইতিমধ্যে আন্দোলনের মূল দল বিএনপি, নতুন কর্মসূচি ঠিক করতে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে। গতকাল রাতেই বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়।
গত সোমবার ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে গণস্বাক্ষর, বিক্ষোভ সমাবেশ, ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জুড়ে মানবপ্রাচীর (মানববন্ধন), পদযাত্রা, পথসভা। বিশেষ করে ২৫ জানুয়ারিকে তাদের ভাষ্যমতে ‘বাকশাল দিবস’ আখ্যা দিয়ে নতুন কর্মসূচিতে মাঠে নামতে চায় সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
গতকাল ১২ দলীয় জোটের শরীক এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলনে যেতে নতুন কর্মসূচি হিসেবে গণস্বাক্ষর, মানবপ্রাচীর, বিক্ষোভ সমাবেশের কথা বলেছি। ১৯ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন, কাজেই ওই দিনটি ঘিরে তাদের এক-দুই দিনের কর্মসূচি থাকতে পারে। তাই আমরা ২৫ জানুয়ারি বাকশাল দিবসকে নির্ধারণ করেছি। এখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সমমনা দল ও জোটের মতামতের পর পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগও বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে একইদিন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি, শোডাউন ও মিছিলের মধ্য দিয়ে মাঠ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে ১১ জানুয়ারি বিএনপির ‘গণঅবস্থান কর্মসূচি’র দিন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের রাজধানীর প্রবেশদ্বার ও পাড়া-মহল্লাগুলোতে সতর্কাবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, রাজধানীর পল্টন, প্রেসক্লাবসহ হাতে গোনা কয়েকটা এলাকা ছাড়া বিএনপিকে রাজধানীতে সেভাবে দাঁড়াতে দেবে না আওয়ামী লীগ। তবে সরাসরি কোনো আক্রমণেও যাবে না দলটির নেতা-কর্মীরা। বিএনপি নেতা-কর্মীরা মাঠে নামার আগেই তারা মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ ১০ বিভাগীয় শহরের গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করতে আন্দোলনের মূল দল বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিট এরই মধ্যে গণসংযোগ, কর্মীসভা, লিফলেট বিতরণসহ প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড শেষ করেছে।
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হবে গণঅবস্থান কর্মসূচি। প্রস্তুতি ভালো, সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। শান্তিপূর্ণভাবে চার ঘণ্টার কর্মসূচি শুরু এবং শেষ করব। আশা করছি, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দেবে না।
বিএনপির কোন নেতা কোন বিভাগীয় গণঅবস্থানে অংশ নেবেন: সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি হলো ঢাকাসহ বিভাগীয় গণঅবস্থান। আজ বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ গণঅবস্থান কর্মসূচির সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো একই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
ঢাকায় গণঅবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস। দলের সাংগঠনিক বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা নেতৃত্ব দেবেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (সিলেট) ড. আব্দুল মঈন খান (রাজশাহী), নজরুল ইসলাম খান (ময়মনসিংহ), আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম), সেলিমা রহমান (বরিশাল), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (রংপুর), বরকত উল্লাহ বুলু (কুমিল্লা), শামসুজ্জামান দুদু (খুলনা), আহমেদ আজম খান (ফরিদপুর) প্রমুখ।
সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর গণঅবস্থান: গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, ১২ দলীয় জোট বিজয় নগর পানির ট্যাংক, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন প্রীতম হোটেলের বিপরীত দিকে, কর্নেল অলি আহমদ নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এফডিসি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে, মোস্তফা মোহসীন মন্টু নেতৃত্বাধীন গণফোরাম আরামবাগ ইডেন কমপ্লেক্স দলীয় কার্যালয়ের সামনে, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যে জোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের পূর্ব প্রান্তে যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি গণঅবস্থান পালন করবে বলে জানিয়েছে দলগুলোর নেতারা।