মোয়াজ্জেম হোসেন : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশকে দেওয়া ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা রিজার্ভে যুক্ত হবে। এরপর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজন মোতাবেক খরচ করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু ঋণ নয়, রিজার্ভের টাকাও হিসাব করে খরচ করতে হবে।

বিশ্লেষকরা বিলাসবহুল এবং অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেওয়ায় সাধুবাদও জানিয়েছেন। তবে ইডিএফসহ বিভিন্ন খাতে ৮ বিলিয়ন ডলার খরচ করা ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

গত বুধবার আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবেই আইএমএফ আমাদের ঋণ দিচ্ছে। ঋণের প্রথম কিস্তি আসবে ৪৪৮ মিলিয়ন ডলার। এর জন্য বাংলাদেশকে কোনো সুদ দিতে হবে না। পরবর্তী ৭ কিস্তিতে অবশিষ্ট অর্থ আসবে। প্রতি কিস্তিতে ঋণের পরিমাণ হবে ৫৫৯.১৮ মিলিয়ন ডলার। আর এ জন্য বাংলাদেশকে সুদ দিতে হবে ২.২ শতাংশ। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।’

এদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। গত বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দেওয়া বক্তব্যের পর রিজার্ভ নিয়ে এ বিভ্রান্তি দেখা দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে রিজার্ভ বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে যা থাকে, সেটিই হচ্ছে নেট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ।’

গত বুধবার গভর্নরের দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী দেশের প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ওই দিন জানানো হয় গ্রস রিজার্ভ আছে ৩৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বুধবার আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।

তথ্য অনুযায়ী, দেশের রিজার্ভ থেকে ৭০০ কোটি ডলার দিয়ে গঠন করা হয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ। এছাড়া রিজার্ভের অর্থ দিয়ে গঠন করা হয়েছে লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ), গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ)। বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতেও রিজার্ভ থেকে সোনালী ব্যাংককে অর্থ দেওয়া হয়েছে। আবার পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতেও রিজার্ভ থেকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। এসব খাতে সব মিলিয়ে ব্যবহৃত হয়েছে ৮০০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জিএম আবুল কালাম আজাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গতকাল দিন শেষে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ৩৪.২৬ বিলিয়ন ডলার। এ তথ্য অনুযায়ী এদিনও রিজার্ভ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দেওয়া হয়নি।’

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাবায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল। আইএমএফের প্রস্তাবে রিজার্ভের প্রকৃত তথ্য দিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেহেতু আইএমএফের প্রস্তাবে রিজার্ভের প্রকৃত তথ্য দিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেহেতু এটা সংশোধন করা হবে। হয়তো নিজেদের মধ্যে একটু আলোচনা বা বৈঠক করার জন্য ক’দিন দেরি হচ্ছে।’

আবুল কালাম আজাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আইএমএফ থেকে যখন ঋণ আসবে তখন সাধারণভাবে এই ডলার আমাদের রিজার্ভের সাথে যুক্ত হবে। আমাদের একাউন্ট ডিপার্টমেন্ট পদ্ধতিগতভাবে এটা রিজার্ভের সাথে যুক্ত করে দেখাবে। তারপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনবোধে সিদ্ধান্ত নিয়ে খরচ করবে।’

কোন খাতে যুক্ত করা হবে প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আইএমএফ কিন্তু আমাদের খরচের খাতগুলো ঠিক করে দেয়নি। তারা আমাদের বেশকিছু খাতে সংস্কারের শর্ত দিয়েছে।’

‘এখন আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সার, জ্বালানি এবং খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে সরকারকে সাপোর্ট দিচ্ছি। ঋণ আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েই খরচ করবে।’

অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আইএমএফ যে ঋণ দিচ্ছে সেটা আমাদের বর্তমান আমদানি ব্যায়ের তুলনায় খুবই কম। তারপরও যেটা দিচ্ছে সেটা দিয়ে রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা শক্ত হলো। তারা ঋণ দিলে অন্যান্য ঋণ পেতে সুবিধা হয়। এদিকে একটা সুবিধা হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইএমএফ যে শর্তগুলো দেয় সেগুলো তারা সবাইকেই দেয়। আর যাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে সমস্যা তাদের দেখা আইএমএফের কাজ।’

এখন হিসাব করে চলার পরামর্শ দিয়ে আবু আহমেদ বলেন, ‘আমাদের আরও আগেই হিসাব করে রিজার্ভের টাকা খরচ করে চলা দরকার ছিল। এখনো যেহেতু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী রিজার্ভে পরিমাণ মতো টাকা আছে। তারপরও হিসাব করে চলতে হবে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বাড়াতে কাজ করতে হবে।’

বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধে সাধুবাধ জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘যদিও এগুলো আমদানি করতে বেশি টাকা লাগে না। এরপরও বর্তমান সময়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু টাকা তো সব পাচার হয়ে যায়। এটা বন্ধ করতে হবে।’ সুত্র : ঢাকা টাইমস