মোঃ ওসমান গনি : যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত এক সপ্তাহ ধরে কোন পরিষ্কার হচ্ছে না।ফলে নতুন ও পুরাতন ভবনের ভেতর বাহির ময়লা আবর্জনায় এক নোংরা পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে জনবল সংকটসহ নানান জটিলতায় হাসপাতাল চত্বরে ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে উঠলেও দৃষ্টি পড়ছেনা কর্তৃপক্ষের।

সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাজে কর্মচারী থাকার কথা ৮ জন। সে স্থলে নিয়োজিত রয়েছে ৩ জন। বছরের পর বছর ধরে ৮ জনের কাজ তিনজনে গোজায়মিল করে সারলেও কাজের মূল কাজ থেকে যায় অনেকাংশে। রোগীর কেবিন, টয়লেট, বারান্দা, প্রথম ও দ্বিতীয়তলার প্রতিটি কক্ষ ও পুরো হাসপাতাল চত্বরে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কাজগুলো দায়সারা ভাবে সেরেছেন পরিচ্ছন্ন কর্মীরা।
হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাজের নাজুক পরিস্থিতি দেখে স্থানীয় এমপি মহোদয় আলহাজ্ব শেখ আফিল উদ্দিন বিষয়টি দৃষ্টি গোচরে নেন। জনবল সংকটের বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আসু সমাধানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ উপস্থাপন করেন।
সিদ্ধান্তে এমপি শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, হাসপাতাল সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে চকচকে রাখতে হবে। সরকারি ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া আপাতত না থাকলে আলাদা ভাবে এ কাজের জন্য আউটসোর্সিং এর লোকবল বাড়াতে হবে এবং তাদেরকে প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন মাননীয় সংসদ সদস্য। টিকিট বিক্রির আয় ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের বেতন বাবদ ব্যয় নিয়ে প্রতি মাসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মনিটারিং কমিটির সাথে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আলোচনায় বসার নির্দেশনা দিয়ে ছিলেন মাননীয় সংসদ সদস্য। কিন্তু দীর্ঘ ১৭ মাসে কোনদিন আলোচনায় বসতে রাজি হননি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। মনিটারিং কমিটির সদস্য ইয়ানুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ্ইউসুফ আলীকে আলোচনায় বসার জন্য কয়েকদিন আনুরোধ করা হলেও তিনি কর্নপাত করেননি।
এক্ষেত্রে এমপি মহোদয়ের নির্দেশক্রমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ করেন। তবে তাদের বেতন ৬ হাজার টাকার পরিবর্তে একজনের ৫ হাজার টাকা ও ২ জনের প্রত্যেকের ৩ হাজার টাকায় চুক্তি করা হয়। এমপি মহোদয়ের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এমন অনিয়মের বিষয়টি আসলেও এমপি মহোদয় জানেন কিনা তা অনেকের বোঝার বাহিরে।
এদিকে উক্ত বিষয়টি মাননীয় এমপি মহোদয়ের কানে না গেলেও আগত কর্মচারী বা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বিষয়টি ঠিকই জেনে যায়। সেই থেকে ওই সমস্ত পরিচ্ছন্নকর্মীরা তাদের নিজেদের কাজে ধীর গতি এনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট এমপি মহোদয়ের নির্দেশনাকে বাস্তবায়নের জন্য প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে কর্ণপাত করাতে থাকে।
একে একে ১৭ মাস পার হয়ে গেলেও পরিচ্ছন্নকর্মীদের নির্দিষ্ট বেতন বাড়ানো নিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইউসুফ আলী।
এদিকে ৫ হাজার ও ৩ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতে থাকা পরিচ্ছন্নকর্মীরা হতাশ হয়ে কাজে ঢিল দিতে দিতে গত এক সপ্তাহ হলো কাজই ছেড়ে দিয়েছেন তারা। হাসপাতালে সরকারী ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত তিন জনের মধ্যে শেফালী খাতুন নামে একজনের ইতোমধ্যে বদলির অর্ডার হয়েছে অন্যত্র।
বর্তমান এ কাজে নিয়োজিত আছে মাত্র ২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী যার মধ্যে একজন হলো কুমার বিশ্বাস। তিনি অফিসের কাজে সিভিল সার্জন অফিসে যাতায়াত ও অন্যান্য কাজ করতে করতে দিন চলে যায়।
অন্য একজন হলো মদন বাসফোর। যার উপর গোটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পরিস্কারের দায়িত্ব পড়েছে। কিন্তু কাজের পরিধি অনুযায়ী তার একার দ্বারা কখনো সম্ভব না।
গোটা হাসপাতাল চত্বর এক সপ্তাহ পরিস্কার না হওয়ায় ময়লা আবর্জনায় ভরে গিয়ে দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু ব্যক্তি স্বার্থ ও অর্থ লোপাটের কারণে হাসপাতালের পরিবেশের দিকে নজর রাখছেন না বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও দূর দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি সৃষ্টিলগ্ন থেকে মানুষের একমাত্র ভরসা হিসাবে সেবা দিয়ে আসছে। সেবার মান বাড়াতে সরকার ৩১ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ৫০ শয্যা করেছে। পুরাতন ভবনটি মেরামতের পাশাপাশি দিয়েছেন নতুন ভবন। রয়েছে নতুন বেড, সরকারি কোয়াটার, ডাক্তারের পাশাপাশি রয়েছে আধুনিক মানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি। ডাক্তার দ্বারা সেবার মান বেড়েছে। তবে সময়ের সাথে সাথে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও উন্নত পরিবেশের বেলায় তা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাহ্যিক ভাবে যে পরিচ্ছন্নকর্মী ৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ করবে তা আসবে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে টিকিটের দাম ও ইমার্জেন্সি বিভাগ থেকে নির্ধারিত আয় এবং অন্যান্য আয় থেকে।
তাই দীর্ঘ ১৭ মাস যাবত বহির্বিভাগে সাধারণ রুগীদের পকেট কেটে অঘোষিতভাবে ৩ টাকার টিকিট ১০ টাকা, ভর্তি রুগীদের কাছ থেকে ৫ টাকার টিকিট ২০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এতে প্রতিমাসে আয় হচ্ছে ৬০-৭০ হাজার টাকা। আর ৩ জন পরিচ্ছন্নকর্মীর জন্য খরচ হচ্ছে মাত্র ১১ হাজার টাকা। অবশিষ্ট টাকা পকেটে ভরছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইউসুফ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি আনিত অভিযোগ ও হাসপাতালের নোংরা পরিবেশের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার হাসপাতাল অন্য হাপাতালের চেয়ে অনেক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। আপনি কিসের সাংবাদিক এই মুহূর্তে আপনার সাথে কথা বলার কোন রুচি নেই। আপনি পরে অফিসে এসে দেখা করেন।