আব্দুল্লাহ আল-মামুন : সরকারি শুল্ক ফাঁকির উদ্দেশ্যে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ‘আতাফল’ আমদানির ঘোষণা দিয়ে মূল্যবান পারসিমন ফল দেশে এনেছে আমদানিকারক। আতাফলের সঙ্গে পারসিমন ফল আমদানির অভিযোগে একটি পণ্য চালান আটক করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কাস্টমস আইনে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২৭০০ কেজি আতাফল আমদানির ঘোষণা দিয়ে চালানের মধ্যে মূল্যবান পারসিমন ফল নিয়ে আসে প্রভা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এতে বিপুল পরিমাণ শুল্ক ফাঁকির অপচেষ্টা করা হয়। সিঅ্যন্ডএফ এজেন্ট আমেনা এন্টারপ্রাইজ মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি পণ্যের চালানটি ক্লিয়ারিংয়ের দায়িত্বে ছিল ।

কাস্টমস বুধবার রাতে বন্দরের ৩১ নম্বর ইয়ার্ড থেকে চালানটি জব্দ করে। এ ঘটনায় কাস্টমস আইনে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে চালানটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কাস্টমস আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অভিযুক্ত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আমেনা এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী বলেন, লাইসেন্সটি ভাড়া নিয়ে বেনাপোলের এক ব্যক্তি কাজ করেন। এসব বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

বন্দর সূত্রে আরও জানা যায়, বাণিজ্যিক নিরাপত্তায় বন্দরে স্ক্যানিং মেশিন রয়েছে। কিন্তু সেটি প্রায় একমাস ধরে অচল হয়ে পড়ে থাকায় বৈধ বাণিজ্যের ভেতর দিয়েই অনিয়মের সুযোগ পাচ্ছেন অসাধু আমদানিকারকরা। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। আগেও বন্দরে বৈধ আমদানি পণ্যের সঙ্গে মিথ্যা ঘোষণার শাড়ি, থ্রিপিচ, ফেন্সিডিল ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আটকের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে, ফলের ট্রাক ইচ্ছাকৃতভাবেই রাতে দেশে ঢোকান আমদানিকারকরা। এতে কাস্টমস ও বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে গভীর রাত পর্যন্ত বন্দরে খালাসের সুযোগ পান। রাতের আধারেই কাস্টমসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বড় বড় শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটে। ধারাবাহিক অনিয়মের কারণেই গত চার মাসে রাজস্ব আয়ে ভাটা পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বিগত চার মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা, সেখানে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি দেখা গেছে ২৪০ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, পারসিমন ফল জাপানের জাতীয় ফল হিসেবে স্বীকৃত হলেও এটি ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে ফলে। এটি হিন্দিতে তেন্ডু ও বাংলায় বিলিতি গাব নামে পরিচিত। অনেকটা টমেটো আকারের বৃত্তাকার বীজশূন্য ফলটি উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ। ফলটি মূল্যবান এবং আমদানি শুল্ক আতাফলের চেয়ে বেশি।