যে সকল শ্রমিকের ‘অধিকার’ নেই অথচ তাদের প্রতি ফোটা ‘ঘামে’ দেশের অর্থনীতি আজ বিশ্ব দরবারে
আসাদুজ্জামান আসাদ :
যে সকল শ্রমিকের ‘অধিকার’ নেই অথচ তাদের প্রতি ফোটা ‘ঘামে’ দেশের অর্থনীতি আজ বিশ্বদরবারে সেই সকল শ্রমজীবী মানুষের কাছে মহান ‘মে দিবসের’ নেই কোন গুরুত্ব।
যে শ্রমিকটি প্রচন্ড রোদে অগনতি ঘণ্টা ধরে গাধার খাটুনি খেটে চলেছে, খুব ভোরে উঠে যার দিন শুরু, আবার রাতে সবার খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে যার ঘুমোনোর সময়,তার জন্য কোনো আট ঘণ্টার মহান মে দিবস নেই। সে জানেও না আট ঘণ্টা মানে কত ঘণ্টা?
শার্শার মাখলার বিলে ভোর বেলায় ধান কাটতে এসেছেন টেংরা মুজিবর রহমান ।তিনি একজন কৃষি শ্রমিক। মে দিবসের কথা জানতে চাইলে মুজিবর বলেন,মে দিবস পালন করলে কেউ টাকা দেবে? পেটে ভাত যাবে কিভাবে?
১৫ বছর ধরে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন টেংরা গ্রামের মিজানুর রহমান, আশারত হোসেন ও মিন্টু মিয়া।
মিজানুর রহমান বলেন,মে দিবস দিয়ে কি করবো ? কাজ না করলে সংসার চলবে কি করে।সংসারের খরচ করে দু’টো ছেলে মেয়ের লেখাপড়া করাচ্ছি এই আয় দিয়ে। বসে থাকলে চলবে ?
শার্শা উপজেলার টেংরা গ্রামের আশারত হোসেন একজন নির্মাণ শ্রমিক। ভোর বেলায় এসেছেন কাজে। মে দিবসে সব বন্ধ থাকে, এটা শ্রমিকদের দিবস, আজ কাজ করতে এসেছেন কেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে আশারত বলেন, মে দিবস কি আমাগো খাইবার (খেতে) দিবো? কাজ না করলে পরিবার নিয়ে খামু কি?
পাঁচ বছর ধরে রাজমিস্ত্রির সহকারি হিসেবে কাজ করে অর্থ যুগিয়ে সামটা গ্রামের শাহাবুদ্দিন পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাতক্ষীরা সিটি কলেজ থেকে এবার তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
শাহাবুদ্দিন বলেন, মে দিবসের সরকারি ছুটি থাকায় পুরো দিন কাজের সুযোগ পেয়েছি। গরীব মানুষের আবার মে দিবস!
শার্শার রিফা ব্রিকস নামের ভাটায় ইট পোড়ানোর মূল দায়িত্ব পালন করেন যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামের তৌহিদুর রহমান। ৪০ বছর বয়সী তৌহিদ আট বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করছেন।
তৌহিদুর বলেন, ‘৬মাসের জেলে থাকতে হয়। এই ৬মাসের একদিন আগেও বাড়ি যেতে পারি না। তাতে যে টাকা মুজুরি পাই তা দিয়ে সংসারের খরচ জোড়াতালি দিয়ে চলে। কষ্ট হয় তারপরেও কাজ করি। এতে আর মে দিবস ।’
কথা হয় ভাটা শ্রমিক আছিয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ইটভাটায় কাজ করা আর জাহান্নামের আগুনে পুড়া সমান কথা। লম্পট স্বামী দু’জন পোলাপান আমার ঘাড়ে দিয়া আরেকটা বিয়া করছে। সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে আগুনে পুড়ে কাজ করতে অয়।
‘শ্রম দিবস কি এ সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। শুধু জানালেন, এক দিন কাজ বন্ধ থাকলে সেদিন না খেয়ে থাকতে হবে ।
অটোরিক্সাচালক জামতলার শাহাবুদ্দিন মোল্লা বলেন, মে দিবস আছে কিন্তু ওই দিন কি হয়, কেন হয়? তা জানেন না তারা। শুধু জানেন, একদিন যদি গাড়ির চাকা না নড়ে, তাহলে তাদের পেটেও টান পড়ে ।
শার্শার ‘প্রগতি কনস্ট্রাকশন’ নামের নির্মাণ শ্রমিকের সংগঠনের প্রধান নজরুল ইসলাম বলেন, যে সকল শ্রমিকদের পরিশ্রমের ফলে এই দেশ আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে সেই শ্রমিকদের দৈনিক ৮ঘন্টা কাজের পারিশ্রমিকে যে বৈষম্য রয়েছে তা দুর করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের পরিশ্রমের টাকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। আর মেহনতি শ্রমিকেরাই করছে মানবেতর জীবনযাপন।