গাজীপুর শ্রমিক আন্দোলনে বাড়ছে করোনা ঝুঁকি
গাজীপুর থেকে বুলবুল খান : শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কিছুদিন কম থাকার পর ফের বেড়েছে। এতে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে জেলাটিতে বসবাসরত গার্মেন্ট শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সকলকে আরও সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছে গাজীপুর জেলা ও পুলিশ প্রশাসন।
গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর জেলা প্রশাসকের দেওয়া তথ্যমতে, করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য ৪৬৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২৯। গাজীপুরে সর্বমোট করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৪৯৬ জন। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে ২০৪ জন। জেলাটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ২ জন। এর আগে গত ১২ মে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ জন, ১০ ও ১১ মে ২০ জন এবং ৯ মে জেলাটিতে আক্রান্ত ছিল মাত্র ১ জন।
অনুসন্ধান বলছে, গত ২০ এপ্রিল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গাজীপুরে কোভিড-১৯ আক্রান্তের হার ১৯.৫ শতাংশ। নারায়ণগঞ্জের পরেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম হটস্পট গাজীপুর। একই দিন গাজীপুর সিভিল সার্জনের দেওয়া তথ্য মতে, ওই দিন পর্যন্ত গাজীপুরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৬৯ জন। এর মধ্য এক দিনেই আক্রান্ত হয়েছে ৯৭ জন। তবে পরবর্তীতে ধাপে ধাপে গাজীপুরে করোনা রোগী সংখ্যা কমে আসে। গেল ৯ মে জেলায় নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ১। তবে গত ১৪ মে পূর্বের ৯৭ জন আক্রান্তের রেকর্ড ভেঙে জেলাটিতে নতুন করে আক্রান্ত হন ১২৯ জন।
অনুসন্ধান আরও বলছে, গাজীপুরে করোনা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি সত্ত্বেও মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বকেয়া বেতন এবং ঈদ বোনাসের দাবিতে একের পর এক গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলনের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় শ্রমিকদের শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই। উল্টো পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, গাড়ি ভাংচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন গাজীপুরে কর্তব্যরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষ করে, শ্রমিকদের সংস্পর্শে আসায় মারাত্মক করোনা ঝুঁকিতে গাজীপুর মেট্রো ও শিল্প পুলিশ। ইতিমধ্যে গেল ১৪ মে গাজীপুর মেট্রো বাসন থানার ১৫ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হন। এ ছাড়া শিল্প পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন খোলা কাগজকে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে একমাত্র ব্যক্তি পর্যায়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া পরিহার করতে হবে। ইতিমধ্যে বাসন থানার ১৫ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ৪ মে আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও জানানো হয়েছে ১৪ মে। এর আগেও গাছা থানার বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছিল। তবে তারা সুস্থ হওয়ার পর মেট্রো পুলিশে আর কেউ আক্রান্ত ছিল না। হঠাৎ করে বাসন থানা পুলিশ আক্রান্তের খবর দুশ্চিন্তার।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, ঈদ বোনাস ও বেতন নিয়ে বিজিএমইএ’র সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের সম্প্রতি বৈঠক হয়েছে। অথচ শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনাগুলোতে বহিরাগতরা মদদ দিচ্ছে। এক কারখানার শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় বহিরাগতরা বিভিন্ন কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে সেসব কারখানার শ্রমিকদের বের করা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার এমন ৩০ জন দুষ্কৃতকারীকে আটক করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ সুপার মো. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, পিপিই পড়ে একজন শিল্প পুলিশ কতক্ষণ দায়িত্ব পালন করতে পারেন। শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে, ভাংচুর শুরু হলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব। শিল্প পুলিশকে শ্রমিকদের খুব কাছাকাছি যেতে হয়। তাদের বোঝাতে হয়। যতই পিপিই পরিধান করুক না কেন, সংক্রমণ ঝুঁকি থেকেই যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গাজীপুর শিল্প পুলিশ।