আজ ঐতিহাসিক ২৩শে জুন
সিরাজুম মুনিরা : বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ।বর্তমান বাংলাদেশ পূর্বে ভারতবর্ষ হিসেবে পরিচিত ছিল।নানা ঘটনার চড়াই -উৎরাই পেরিয়ে আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
১২০৪ সালে মুসলিম শাসক ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বিন-বখতিয়ার খলজি কতৃর্ক বাংলা বিজিত হয়ে ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন হয়।
তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাংলায় নবাবী শাসনের সূচনা হয়। বাংলার প্রথম স্বাধীন নবাব মুর্শিদকুলী খান। তিনি বাংলার রাজধানী “ঢাকা” থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন। তাঁর পরে বাংলার সিংহাসন আরোহণ করেন আলীবর্দী খান। তাঁর শাসনামলে মারাঠারা প্রতিবছর বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা আক্রমন করত মারাঠা হানাদাররা লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে বাংলার জনগণের মনে ত্রাসের সঞ্চার করেছিল যে, বহুলোক দেশ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে গঙ্গার পূর্বদিকের জেলাগুলোতে পালিয়ে যায়।বাংলায় মারাঠা আক্রমণকারীকে “বর্গী”নামে পরিচিত ছিল।
১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দিখানের মৃত্যর পর তদীয় দৌহিত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার মসনদে আরোহণ করেন।তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘরে-বাইরের ষড়যন্ত্র ও বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হন।পূর্ণিয়ার ভূতপূর্ব শাসনকর্তার পুত্র শওকত জঙ্গ এবং ঢাকার ভূতপূর্ব শাসনকর্তার বিধবা পত্নী ঘসেটি বেগম ও তার দিওয়ান রাজবল্লভ সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিলেন। ইংরেজরা সুযোগ বুঝে এই ষড়যন্ত্র, বিরোধিতা এবং শেষ পর্যায়ে যুদ্ধ ঘোষণা,যার চুড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছিল ১৭৫৭ সালের এই দিনে পলাশী প্রান্তরে সংঘঠিত যুদ্ধে।
বহুদিন থেকে ইংরেজরা বাংলার শাসনকার্যে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ খুঁজতে থাকে।শওকত জঙ্গ,ঘসেটি বেগম এবং তার দিওয়ান রাজবল্লভ সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়লে ইংরেজ স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশে উক্ত ষড়যন্ত্রে যোগ দেয়।ফলে সিরাজ দেশের দুশমন ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েন।মীর জাফর, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, ইয়ার লতিফসহ স্বার্থপর কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়েন। স্বীয় উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ক্লাইভ এ ষড়যন্ত্রে যোগদান করে মীর জাফরকে বাংলার মসনদে বসার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। বিশ্বাসঘাতকতা, জালিয়াতি, স্বার্থপরতা ও দেশদ্রোহিতার এক অতি নীচ ও জঘন্য ষড়যন্ত্রের জাল”পাকাপোক্ত হয়ে গেলে রবাট ক্লাইভ মাত্র তিন হাজার সৈন্যসহ” ১৭৫৭সালের ২৩শে জুন” খুব ভোরে ভাগীরথির তীরে পলাশীর আম্রকাননে নবাবের ৫০হাজার সেনাবাহিনী মোকাবেলা করেন। নবাবের সেনাপতি মীর জাফর ও রায়দুর্লভ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সেনাদল নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রেই পুতুলের মত দাঁড়িয়েই রইল। মীর মদন ও মহন লাল মাতৃভূমি রক্ষার্থে প্রাণপণ যুদ্ধ কররলেন। মীর মদন যুদ্ধ ক্ষেত্রেই প্রাণত্যাগ করেন। মোহন লাল বীর বিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। নিশ্চিত বিজয়ের মুহূর্তে মীর জাফরের কুপরামর্শে যুদ্ধ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সুযোগে ইংরোজরা পাল্টা আক্রামণ চালালে নবারের বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয় পড়ে। নবাব কোন মতে প্রাণ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালায়ন করেন। যুদ্ধে নবাবের পাঁচশত সৈন্য নিহত হয়েছিল এবং ইংরোজদের মাত্র ২৩জন সৈন্য নিহত ও ৪৯জন আহত হয়েছিল। সিরাজ মুর্শিদাবাদে প্রত্যাগমন করে একটি নতুন সেনাবাহিনী গঠনে ব্যার্থ হয়ে স্বীয় পত্নী ও কন্যসহ পাটনার উদ্দেশ্যে পালায়নকালে পথিমধ্যে রাজমহলে ধৃত হয়ে বিশ্বাসঘাতক নতুন নবাব মীর জাফরের পুত্র মীর মীরণের আদেশে মুহাম্মদি বেগ কতৃর্ক নিহত হন (২-৭-১৭৫৭) সিরাজের মর্মান্তিক মৃত্যুতে বাংলা তথা সমগ্র ভারতের স্বাধীনতার সূর্য প্রায় দুই শতাধিকও বেশী বছরের জন্য অস্তমিত হয়েছিল এবং ব্রিটিশ রাজশক্তির উদিত হয়।
বাংলার মানুষ’ নিজেদের অধিকার ও সুবিধা বঞ্চিত হয়। রাজনৈতিক কাজে এদেশ বাসীর কোন অধিকার থাকে না। এদেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে ব্রিটিশ শাসনকর্তারা। ইঙ্গ-ফরাসি সংঘর্ষের প্রভাব বেড়ে যায়। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাশ্চাত্য প্রভাব বেড়ে যায়। যার প্রভাবে আমরা এখনও প্রভাবিত।
২৬২ (১৭৫৭-২০১৮) বছর পরও বাংলার মানুষ’ এখনও পরাধীনতার শৃঙ্গলে আবদ্ধ। “জোর যার মুল্লুক তার এখনও এই নীতি চলমান”। আগে যেটা সুদ হিসেবে গ্রহন করা হত, সেটা এখন লাভ হিসেবে গণ্য করেন গণ্যমান্য-জঘন্য ব্যক্তিবর্গ।
বাংলার মানুষ’ ব্রিটিশ শাসন-শোষণে নিষ্পেষিত হয়ে তার থেকে মুক্ত হবার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দর্শনে বুঝা যায় যে বিদেশী সংস্কৃতিতে তারা কতটা প্রভাবিত।
ভাষার জন্য আন্দোলন-৯মাস যুদ্ধ করে লাখো বাঙ্গালির রক্তের বিনিময়ে,মা-বোনের সম্ভ্রমেরর বিনিময়ে, শেখ মুজিবের সোনার বাংলার সোনার দামাল ছেলে -মেয়েরা কিভাবে অন্য ভাষায় গড়গড় করে কথা বলছে, পোশাক -পরিচ্ছেদ, সাজুগুজু নিয়ে ব্যস্ত আছে। বিদেশী চ্যানেল আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে গ্রাস করছে। বাংলার দামাল ছেলে-মেয়েরা ইতিহাস জানেনা কিন্তু ঠিকই নায়ক-নায়িকা, কখন কোন সিনেমানাটক সিনেমা হলে আসছে ঠিকই জানে, কখন কোন মোবাইল অথবা মোটর বাইক বাজারে আসছে সেটার খবর রাখে।
২৬২ বছর আগে বাংলার নবাবের সাথে ব্রিটিশ বাহিনী ও বিশ্ব ইতিহাসের নটরাজ বেঈমান মীর জাফর বিশ্বাসঘাতকতা করে বাংলায় দখল করে বিদেশী শাসন-শোষণ করে। আর বর্তমানে ক্ষমতাধর সংখ্যালঘু দল বিশ্বাসঘাতকতা দ্বারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দিনের পর পর বাংলাদেশের মানুষের উপর তাদের শাসন -শোষণ চালাচ্ছে, চোঁখ থাকিতে অন্ধ!
গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে রাজকীয় কাজে সাধারণ জনপ্রতিনিধির কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সরকার কিছু লোককে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব দিয়েছেন কিন্তু তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাকরীর ক্ষেত্রে পরিবারপরিজন কোন দলে আওতাভূক্ত বিবেচনা করে চাকরী দিচ্ছে। সরকার অভাবীদের জন্য স্বল্পমূল্যে চাল প্রদানের ব্যবস্থা করছেন সেখানেও সরকারের দোহায় দিয়ে ক্ষমতাধর কিছু ব-কলম ব্যক্তি তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রভৃতি ভাতা যারা পাবার যোগ্য তারা না পেয়ে যাদের আছে তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে।
সমাজ সেবা -দেশসেবা করতে গেলে বিদ্যা+বুদ্ধিবল বাঞ্চনীয় কিন্তু বর্তমানে যাদের ব-কলম জ্ঞান সুসম্পন্ন তারাই গ্রাম -শহর পর্যায়ে সমাজ সেবা করছে। স্কুল-কলেজের সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছে অল্প শিক্ষত লোকজন। সজিদের সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছেন অযোগ্য লোক। মন্দিরেও একই অবস্থা।।
তবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবের দেশ, দেশরত্ন শেখ হাসিনার সোনার বাংলায় এসব মীর জাফরের কাছ থেকে জাতি কি শিক্ষা গ্রহন করবে? আর কি দিয়ে নতুন করে ইতিহাস রচনা করবে? জাতিকে কি উপহার দিবে ? পূর্বে ব্রিটিশ বাহিনী দ্বারা প্ররোচিত হয়ে মীর জাফর বিশ্বাসঘাতকতা করে ইতিহাসে বিশ্বঘাতকের নায়ক হয়েছে, আর বর্তমানে এসব ঘাতকের নাম ইতিহাসে কোন পাতায় লেখা হবে আর কতটা লেখা হবে? সত্যতা নির্ণয়ে কোন বিশ্বাসীই থাকবে না ? অসহায় মানুষের প্রাপ্তধন নিয়ে সম্পদশালী সম্প্রদায় কালো টাকার পাহাড় গড়ছে।
পানি থেকে শুরু করে সকল প্রকার খাদ্য-পানীয় ভেজালে ভরপুর করছে। টাকার জন্য আপন পর হয়ে যাচ্ছে। এটাই কি বঙ্গবন্ধু দেশ মুজিবের স্বপ্ন?
স্বপ্ন ভাঙ্গার জন্য বিশ্বঘাতকের অবদান বর্ণনাতীত!! বিশ্বাসঘাতক ও ব্রিটিশরা এদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন করেছেন, ক্ষয়ক্ষতি করেছেন আবার উন্নত জীবন যাপনের পথ দেখিয়েছে। বাংলার মানুষ’ তাদের সংস্কৃতিতে প্রভাবিত হয়েছে। হীতে বিপরীত করে বিভিন্ন অন্যায়ে লিপ্ত হচ্ছে। চুরি ডাকাতি, খুন-রাহাজানিতে লিপ্ত হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু যর্থাথ বলেছিলেন”সবাই পেয়েছে খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি”।
এই দিনে সবার কাছে আবেদন বিদেশী সংস্কৃতি থেকে ফিরে এসে নিজ সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হবার। সু্বিধা বঞ্চিতদের শাসন-শোষণের অবসান। বিশ্বস্ততায় দেশ গড়ার আত্নবিশ্বাস। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রত্যায়ী মনোভাব। ভ্রাতৃত্ব বোধ জাগরিত হউক। ক্ষমা, ত্যাগ, তিতিক্ষা শিক্ষাই মহৎ। যার ধর্ম তার তার। ধর্মকে দোষারোপ নয়। “এদেশ আমার এদেশ তোমার সবিশেষ মুজিবের”